ফোন হ্যাং করে? ফোনের স্পিড বাড়াতে করণীয় জেনে নিন

ফোন হ্যাং করে? ফোনের স্পিড বাড়াতে করণীয় জেনে নিন

ফোনের বয়স বাড়তে থাকলে ধীরে ধীরে ফোন হ্যাং করা শুরু করে। তাড়াহুড়ো করার সময় ফোন হ্যাং করলে অনেকসময় মেজাজ বিগড়ে যায়। ফোন হ্যাং করা স্বাভাবিক একটি ঘটনা; যেকোন ইলেকট্রনিকসের যন্ত্র মাত্রই হ্যাং করে। আমাদের মোবাইল ফোনও এর ব্যাতিক্রম নয়। তবে কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখলে মোবাইল ফোন হ্যাং এর মত বিরক্তিকর জিনিসগুলো সহজেই এড়িয়ে যাওয়া যায়। আজকে আমরা আমাদের ব্লগে দেখবো ফোন হ্যাং করা থেকে বাঁচতে করনীয়।

এই ব্লগে যা যা থাকছে-
  • মোবাইল ফোন হ্যাং কেন করে?
  • মোবাইল ফোন হ্যাং করে যে অ্যাপসগুলোর জন্য
  • মোবাইল ফোনের স্পীড বাড়াতে করণীয়


মোবাইল ফোন কেন হ্যাং করে?

বিভিন্ন কারণে একটি ফোন হ্যাং করতে পারে। সাধারণত ফোন হ্যাং করা বলতে বুঝায়, ফোন চলতে চলতে যাস্ট স্টপ হয়ে যাওয়া। কেবল পাওয়ার বাটন কাজ করে; অন্য সব কিছু থেমে থাকে। অনেকসময় পাওয়ার বাটনও কাজ করেনা। অর্থাৎ ফোন চলতে চলতে হঠাৎ থেমে যাওয়াকেই মূলত মোবাইল হ্যাং করা বলে।

 

ফোন ক্রয় করার প্রথম দিকে কোন ফোন ই তেমন একটা হ্যাং করেনা কিন্তু দিন যত যায় ততই ফোন হ্যাং করতে থাকে। দেখা যায় ফোন কেনার ১/২ বছর ভালো সার্ভিস দিলেও ২ বছরের পর থেকে হ্যাং করার সমস্যা দেখা দেয়। মূলতঃ মোবাইল ফোন কয়েকটি কারণে হ্যাং করে যেমন-

  • র‍্যামের স্পেস ও বয়স: যে ফোনের র‍্যাম স্পেস যত বেশি, সে ফোনের স্পিড তত বেশি অর্থাৎ হ্যাংগিং এর প্রবলেম র‍্যামের উপর নির্ভরশীল। র‍্যাম (RAM) এর স্পেস যত বেশি থাকবে ফোন হ্যাং তত কম করবে। একটি ফোনের র‍্যামের কার্যকারিতা সময়ের সাথে সাথে কমতে থাকে ফলে একটি ফোনের বয়স বাড়ার সাথে সাথে এর র‍্যামের কার্যকারিতা কমে যায়। এজন্য প্রথমদিকে ফোন হ্যাং না করলেও পরবর্তীতে তা কমতে থাকে।

  • ফোনের প্রসেসর: সময়ের সাথে সাথে ফোনের ব্যবহার বেড়েছে। ফোন দিয়ে এখন মানুষ কেবল কথা বলছে না বরং ভিডিও চ্যাট, ফাইল এডিটিং, গেইম খেলা এমনকি মুভিও দেখছে। এত বিশাল কাজগুলো করতে গেলে ফোনের প্রসেসরেরও সেই সক্ষমতা থাকতে হবে। একটি ফোন যখন কেনা হয় তখন সেই সময়ে প্রসেসর কুলিয়ে উঠতে পারলেও সময়ের সাথে সাথে ফোনের বহুমাত্রিক ব্যাবহার বাড়ে কিন্তু প্রসেসর আগেরটাই থেকে যায়; যে কারণে প্রথম দিকে না হলেও পরবর্তীতে ঠিকই ফোন হ্যাং করে।

  • বড় বড় গ্রাফিক্স অ্যাপস: অনেক অ্যাপস আছে যেগুলোর গ্রাফিক্স তুলনামূলক অনেক হাই প্রসেসরসম্পন্ন ফোনের জন্য পার্ফেক্ট। সেই অ্যাপসগুলো যদি আপনি ল'য়ার প্রসেসরে ইন্সটল করেন সেক্ষেত্রে ফোন হ্যাং করবে এটাই স্বাভাবিক। গ্রাফিক্স অনেক হাই প্রসেসরসম্পন্ন ফোনের জন্য বলতে বুঝানো হচ্ছে- কিছু অ্যাপস আছে যেগুলোর ডিজাইন করতে গিয়ে অনেক বেশি স্পেসের প্রয়োজন হয়ে থাকে।


এছাড়াও আরও নানাবিধ কারণে ফোন হ্যাং হতে পারে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করছিনা৷ আজকে আমরা আলোচনা করবো, কিভাবে ফোনের স্পীড বৃদ্ধি করা যায় এবং ফোনের হ্যাং কিভাবে রোধ করা যায়। ঢাকা স্টাফের ব্লগটি পড়তে থাকুন।


যে অ্যাপসগুলোর কারণে ফোন হ্যাং করে

ফোন হ্যাং করার পেছনে মূলতঃ আপনার ব্যবহারকৃত অ্যাপসগুলোই দায়ি৷ আজকে আমরা আপনার কিছু পরিচিত অ্যাপস নিয়েই আলোচনা করবো যেগুলো আপনার ফোন হ্যাং করে দেয়। কিছু অ্যাপস আছে যেগুলো ব্যবহার না করলেই নয় সেগুলো ব্যবহার করে বরং যেগুলো না করলেও চলবে সেগুলো আনইন্সটল করলে ফোন হ্যাং থেকে অনেকটাই বেঁচে থাকা সম্ভব।

  • অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপস: যেকোন ধরণের অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপস ই অনেক গ্রাফিক্সসমৃদ্ধ হয় অর্থাৎ এন্টিভাইরাস অ্যাপস ব্যবহারের কারণে আপনার ফোনের র‍্যাম স্পেস অনেকটাই দখল হয়ে যায়৷ মজার ব্যাপার হচ্ছে, অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপসগুলো বস্তুত কোন কাজেই লাগেনা কারণ আপনি যে ফোন ব্যবহার করছেন সেটিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপস সংযোগ করে দেওয়া থাকে "বুইল্ড ইন" হিসেবে অর্থাৎ একটি ফোনে নতুন করে অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপসের দরকার নেই।

  • বিভিন্ন রকম থিম অ্যাপস: গুগল প্লে স্টোরে যে থিমগুলো পাওয়া যায় সেগুলোর প্রতিটি থিমের অনেক জায়গা দখল করে। শুধু জায়গা দখল করাই নয় বরং আপনার ফোনের প্রায় সম্পূর্ণ অংশ নিয়ন্ত্রণ করে এই থিম। মোবাইল হ্যাং করার পেছনে থার্ড পার্টির এগুলো থিম অনেকটাই দায়ী। ফোনে একাধিক বুইল্ড ইন থিম দেওয়া থাকে; সেগুলো ব্যবহার করলে মোবাইল হ্যাং থেকে অনেকটাই বাঁচা যায়।

  • র‍্যাম ক্লিনার: সবথেকে হাস্যকর অ্যাপস হচ্ছে যেকোন কোম্পানির র‍্যাম ক্লিনার। আপনি র‍্যাম ক্লিন করার জন্য যে অ্যাপস ইনস্টল দিবেন; দেখবেন সেই অ্যাপস ই অনেক র‍্যাম স্পেস খেয়ে বসে আছে! ব্যাপারটি হাস্যকর নয়তো কি? যাইহোক, প্রতিটি ফোনের সাথেই এখন র‍্যাম ক্লিনার দেওয়া থাকে। আপনি বুইল্ড ইন র‍্যামি ক্লিনার ইউজ করুন। সিসি ক্লিনারের মত থার্ড পার্টি র‍্যাম ক্লিনার ইউজ করলে বরং হিতে বিপরীত হবে৷

  • বিভিন্ন রকম গেইম: গেইম খেললে মোবাইল হ্যাং করবেই। প্রতিটা গেইম এর ক্ষেত্রেই গ্রাফিক্সের প্রশ্ন আসে। যেসকল গেইমসের গ্রাফিক্স কম সেগুলো খেললে তেমন সমস্যা হয়না কিন্তু মোটর রেসিং কিংবা পাবজির মতো গেম খেললে প্রচুর র‍্যামের প্রয়োজন পরে। অনেকসময় ডাটা সেভ হয়ে থাকে বিধায়, পরবর্তীতে হ্যাং থেকে আর ফোনকে তেমন রক্ষা করা যায়না। যদি ফোন দিয়ে গেইম খেলা মুখ্য হয় তাহলে হ্যাং হওয়া মেনে নিয়েই গেম খেলুন।

  • ফেসবুক ও মেসেঞ্জার: আপনার ফোন র‍্যামের যত স্পেস তার অর্ধেকটা পূর্ণ করে দেয় ফেসবুক ও তার সহযোগী মেসেঞ্জার। আপনার ডাটা ইউজেরও অর্ধেক জুড়ে এই দুটি থাকে। যেহেতু ফেসবুক আর মেসেঞ্জার ছাড়া আপনি চলতে পারবেন না তাই ফোন হ্যাং হওয়ার ক্ষেত্রে এই অ্যাপস দু'টোকে ছাড় দেওয়াই ভালো।

  • বিভিন্ন রকম ব্রাউজার: আপনি যেকোন ব্রাউজারের কথা বলেন না কেন সকল ব্রাউজারই ফোনের অনেক স্পেস দখল করে বসে। গুগল ক্রোম থেকে শুরু করে মজিলা ফায়ারফক্স যেকোন ব্রাউজার ই র‍্যামের ১২টা বাজায়৷ এক্ষেত্রে আপনি যেকোন একটি ব্রাউজারে কাজ সারতে পারেন৷ একাধিক ব্রাউজার ইউজ করতে গেলে মোবাইল ফোন হ্যাংক করবেই। আপনি গুগল ক্রোমটা ব্যবহার করতে পারেন অথবা যে ব্রাউজারটি আপনার ফোনে বুইল্ট ইন থাকবে; সেটি ইউজ করুন।


ফোনের স্পিড বাড়াতে করণীয়

ফোন হ্যাং বা স্লো হওয়ার মূল কারণ বিভিন্ন রকম অ্যাপস৷ এখন ফোনকে গতিশীল রাখতে বা স্পীড বাড়াতে কি করবেন? অ্যাপসগুলো আনইন্সটল করবেন? না, অনেক অ্যাপস আছে যেগুলো আনইন্সটল করতে পারবেন না। যেমন, অনেকেই ফোন কিনে সাধারণত ফেসবুক চালানোর জন্যই। এখন ফোন হ্যাং করার জন্য যদি ফেসবুক ই না চালাতে পারেন তাহলে তো প্রবলেম। এক্ষেত্রে করনীয় কি? ফোনের স্পীড বাড়াতে কিছু করণীয় সম্পর্কে ঢাকা স্টাফের পরামর্শ এক এক করে তুলে ধরা হলো।

মাঝে মাঝে ফোন রিস্টার্ট দিন

অনেকেই আছেন যারা ফোন চালু দেওয়ার পর আর কখনোই বন্ধ করতে চান না। তাদের জন্য আফসোস হয়। ইলেক্ট্রিক পণ্য টানা অনেকদিন চললে র‍্যাম কিংবা প্রসেসর অনেকটাই দূর্বল হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে ফোন রিস্টার্ট দিলে মোবাইল ফোন পুনরায় উজ্জীবিত হয়।

একটি নিয়ম করে মাসে দু'য়েকবার কিংবা যখন মনে হবে তখন ফোন রিস্টার্ট দেওয়া উচিত। রিস্টার্ট এর বাংলা হচ্ছে- বন্ধ করে পুনরায় ফোন চালু দেওয়া৷ কেউ আবার রিস্টার্টকে রিসেট মনে করবেন না। ফোন রিস্টার্ট দিলে র‍্যাম ক্লিন থাকে যা ফোনের স্পীডকে ধরে রাখে।


বিভিন্ন অ্যাপসের ডাটা ক্লিন রাখুন

ফেসবুক, মেসেঞ্জার কিংবা বিভিন্ন ব্রাউজারগুলোর ক্যাশ ক্লিন করুন নিয়মিত। অ্যাপসগুলোর ডাটাও ক্লিন করুন। পূর্বেই বলা হয়েছে, এরকম অ্যাপসগুলো র‍্যামের প্রচুর জায়গা খেয়ে ফেলে। র‍্যামকে বাচাতে হলে নিয়মিত এসব অ্যাপসের ডাটা ক্লিন করতে হবে৷ কিভাবে এসব অ্যাপসের ডাটা ক্লিন করবেন?

আপনার ফোনের সেটিংসে গিয়ে ম্যানেজ অ্যাপস এ যান। সেখানে আপনার সকল অ্যাপস প্রদর্শিত হবে। এবার প্রদর্শিত অ্যাপসগুলোর মধ্যে এই অ্যাপসগুলোর অপর ক্লিক করে সেখান ডাটা অপশনে গিয়ে ক্লিন করুন। এক এক ফোনে এক এক রকম, অপশন পাবেন তবে সকল ফোনে প্রায় একই রকম নিয়ম। ঘাটাঘাটি করলেই ডাটা ক্লিনের অপশন পেয়ে যাবেন। 


সকল ফাইল এসডি কার্ডে রাখুন 

অনেকসময় আমরা আমাদের ফাইলগুলো ফোন ম্যামোরিতে রাখি। এটি ঠিক নয়। আপনার ফাইলগুলো এসডি কার্ডে রাখার চেষ্টা করুন। ফোন মেমোরিতে জায়গা কমে গেলেও অনেক সময় ফোন হ্যাং করে বা স্লো হয়ে যায় এক্ষেত্রে এসডি কার্ডের যথাযথ ব্যাবহার করুন।

এসডি কার্ড ব্যবহারের আরেক সুবিধা হলো, ফোন কোন কারণে রিসেট দিতে হলে অনেকসময় গুরুত্বপূর্ণ ফাইলগুলো মুছে যাওয়ার প্রবণতা থাকে। এসডি কার্ডে রাখলে সেগুলোর ঝুঁকি একদম থাকেনা।  ফোন সকম স্পেসের এসডি কার্ড সাপোর্ট করেনা। বর্তমানে ৩২জিবি এসডি কার্ডের প্রচলন বেশি হওয়ায় আপনি এটি ইউজ করতে পারেন। তবে এসডি কার্ড অবশ্যই ভালো মানের হওয়া চাই। বাজারে এখন কমদামে যে এসডি কার্ড পাওয়া যায় তার অধিকাংশই নকল।

অ্যাপস আপডেট রাখুন

মোবাইল হ্যাং বা স্লো হওয়ার পেছনে এটি অনেকটাই দায়ি। অ্যাপস আপডেট না করলে অনেকসময় ভাইরাসের আক্রমণও হতে পারে। অ্যাপস আপডেট করা ফোন স্পীড বাড়ানোর গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। প্রতিটি অ্যাপস ই কয়েকদিন পর পর আপডেট ভার্সন রিলিজ করে।

ফেসবুক কিংবা গুগল ক্রোমের মত ব্রাউজার মাসে কমপক্ষে ৪/৫ বার অ্যাপসের আপডেট ভার্সন রিলিজ করে। কষ্ট করে হলেও তাদের আপডেট ভার্সন প্রকাশের সাথে সাথে আপনার ফোনের অ্যাপসও আপডেট করে ফেলুন৷ এখানে স্পীডের সাথে নিরাপত্তা বিষয়টিও জড়িত।

শুধু যে আপনার ডাউনলোডকৃত অ্যাপস আপডেট করবেন তাও নয় বরং বুইল্ট ইন যে অ্যাপসগুলো রয়েছে সেগুলোও আপডেট করুন। ফোনের সেটিংসে গেলেই আপডেট ভার্সনের নোটিফিকেশন পাবেন। যদি নোটিফিকেশনে আপডেট ভার্সন রিলিজের বার্তা পান তবে অপেক্ষা না করে আপডেট করে ফেলুন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

3 মন্তব্যসমূহ