ময়মনসিংহে
জন্ম নেওয়া ডাক্তার এজাজুল ইসলাম টিভি নাট্যকার হলেও মূলত পেশায় তিনি একজন
নিউরো মেডিসিন বিশেষজ্ঞ। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজের নিউরো মেডিসিন
বিভাগের প্রধান। ১৯৮৪ সালে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করে
বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতোকোত্তর ডিগ্রী নেন। এরপর থেকে
গাজীপুর চৌরাস্তায় তার নিজ চেম্বারে নিয়মিত রোগী দেখেন। পরবর্তীতে হুমায়ুন
আহমেদের সান্নিধ্যে তিনি টিভি নাটকে অংশগ্রহণ করেন। কিছু চলচ্চিত্রেও অভিনয়
করেছেন তিনি।
তার
সংক্ষিপ্ত জীবনী এ পর্যন্ত হলেই হয়তো ঠিক থাকতে পারতো কিন্তু তিনি ডাক্তার
এজাজ। হ্যা, আমাদের ডাক্তার এজাজ। গদবাধা ধারাবাহিক ছোট্ট জীবনী থেকেও মহৎ
এই ব্যাক্তিটি এক কথায় একজন সত্যিকারের নায়ক।
চলুন জেনে নেয়া যাক, নায়ক হয়ে উঠার পেছনে এই মানুষটির ছোট ছোট কিছু অবদান।
যেসকল
ডাক্তাররা বাংলাদেশে চিকিৎসা শাস্ত্রে নিজেদের জাত চিনিয়েছেন তাদের মধ্যে
ডাক্তার এজাজ একজন। নিউরো মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এজাজ গাজীপুর চৌরাস্তায়
নিয়মিত রোগী দেখেন। রোগী দেখার ফী মাত্র ৩০০ টাকা। বাংলাদেশে এত কম টাকায়
রোগী দেখা ডাক্তার হাতে গোনা মাত্র কয়েকজন। হ্যা, আর সে জন্যেই ডাক্তার
এজাজ বাংলাদেশে গরীবের ডাক্তার হিসেবে পরিচিত। শুধু এটুকুতেই যদি ডাক্তার
এজাজকে বর্ণনা করতে চান তবে তো ডাক্তার এজাজকে চেনাই হয়নি আপনার! কারণ এই
৩০০ টাকা ভিজিট ফী ধনী গরীব সবার জন্যই। তিনি ব্যাতিক্রম এইকারণে যে,
গরীবদের জন্য তার এই ফি অনেকটাই শিথিলযোগ্য অর্থাৎ গরীব রোগীদের ক্ষেত্রে
তিনি বিনা ফিতেই রোগী দেখেন। এই দেশে যখন গরীব রোগীদের একটি বিরাট অংশ
ডাক্তারদের ফি দিতে গিয়ে ওষুধ কেনার টাকা জোগাড় করতে পারছেন না তখন ডাক্তার
এজাজের মত নামকরা একজন বিশেষজ্ঞ বিনামূল্যে রোগী দেখে যাচ্ছেন!
ডাক্তার
এজাজের চেম্বারের পাশেই ঢাকা স্টাফের সাথে কথা হয় নাজনীন বেগমের। জামালপুর
থেকে আসা এ রোগী জানান, গতমাসে ডাক্তার এজাজকে "মাথার সমস্যা" দেখিয়েছেন
তিনি। বিনা ফি'তে ডাক্তার দেখালেও এমআরআই এবং আরও কিছু টেস্ট করার মতো অর্থ
না থাকায় বাড়ীর পথ ধরেন তিনি ও তার সঙ্গে থাকা মেয়ে। গাজীপুর ত্যাগ করার
পুর্বে একজন রিকশাওয়ালার পরামর্শে অর্থ সংকটের কথা ডাক্তার এজাজকে জানালে
ডাক্তার এজাজ নিজে তার টেস্ট করার ব্যবস্থা করে দেন বলে জানান পঞ্চাশোর্ধ এ
নারী। ডাক্তার এজাজকে বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, এ যুগে এমন ডাক্তার
পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।
গাজীপুর
বড়বাড়ি থেকে আসা ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধার ছেলের সাথে কথা হয় ঢাকা স্টাফের।
বাসের হেল্পার আবু সাইদ ঢাকা স্টাফ কে জানান, বাবাকে নিয়ে তিনি বিভিন্ন
ডাক্তারের কাছে গেছেন কিন্তু কোন ভালো চিকিৎসা পান নি। ভিজিট ফি আর টেস্ট
করাতে করাতে এখন প্রায় নিঃস্ব হয়ে যাওয়ার উপক্রম। বাবাকে রক্ষা করতে তাই
তিনি ডাক্তার এজাজের কাছে ছুটে এসেছেন। ডাক্তার এজাজের কথা কিভাবে শুনেছেন
জানতে চাইলে ঢাকা স্টাফকে সাইদ জানান, ডাক্তার এজাজ একজন নামকরা ডাক্তার।
প্রথমে ভেবেছিলাম, অনেক টাকা নেয় কিন্তু পরে শুনি তার ভিজিট অনেক কম।
গরীবদের কাছে তিনি কোন ধরনের ফি নেন না।
ঢাকা স্টাফ আরও কয়েকজনের কাছে ডা. এজাজ সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা প্রায় সবাই একই কথা বলেন।
এ
তো গেল, ডা. এজাজের একটি গুণাবলী। নাট্যকার হিসেবেও তিনি সবার শ্রদ্ধেয়
একজন ব্যাক্তি। নিজের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে কখনোই কোন ব্যাক্তির বা
সহশিল্পীদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ঝেড়েছেন বলে জানা যায়নি। সবার সাথে হাসিখুশি আর
নির্লোভ এই ব্যাক্তিটির বিরুদ্ধে একটিমাত্র অভিযোগও পাওয়া যায়নি। অভিনেতা
এজাজুলের সেটে কাজ করা সুমন মাহমুদ জানালেন, উনার ক্যারিয়ার জীবনে একটি
দিনের জন্যও কাউকে ধমক দিতে দেখেন নি।
বিনীত এবং হাসিখুশি এ মানুষটিকে নিয়ে গর্ব করার আরও হয়তো শত কারণ আছে কিন্তু তিনি তা চাননা বলেই হয়তো সেগুলো আমাদের অজানাই রয়ে গেছে।
বাংলাদেশে
বর্তমান সময়ে নির্লোভ আর নির্ঝর সাদাসিধে ব্যাক্তি পাওয়া বড়ই দুষ্কর আর
এর মধ্যেই ডাক্তার এজাজ জীবন্ত কিংবদন্তি হয়ে আমাদের মাঝে বেচে আছেন।
অনেক
সময় এসব কিংবদন্তীর মৃত্যুর পর আমরা মূল্যায়ন করি অথচ ইচ্ছা করলেই আমরা
ডাক্তার এজাজকে বেচে থাকতেই তার কাজের মূল্যায়নটুকু করতে পারি। ডা. এজাজকে
ভালোবাসতে পারাটাও একটা গর্বের ব্যাপার। আসুন, জীবন্ত কিংবদন্তী ডা. এজাজকে
ভালোবেসে সমস্বরে বলি- "বেচে থাকুক এজাজ, সকলের মাঝে"।
0 মন্তব্যসমূহ