ইউটিউবে আপনার একটি চ্যানেল আছে। সেই চ্যানেলে গুগল এডসেন্সের এপ্রুভাল পেতে আপনাকে অবশ্যই কিছু বিষয় জানতে হবে। গুগল এডসেন্স মনেটাইজেশনের সকল তথ্য নিয়ে আপনার সামনে হাজির ঢাকা স্টাফ। চলুন জেনে নেয়া যাক, এডসেন্স এপ্রুভালের খুটিনাটি।
গুগল এডসেন্স কি?
গুগল এডসেন্স হলো জায়ান্ট কোম্পানি গুগলের একটি এড নেটওয়ার্ক যার মাধ্যমে পাবলিশার বা ইউটিউবাররা তাদের ওয়েবসাইটে বা চ্যানেলে বিভিন্ন কোম্পানির এড প্রদর্শন করাতে পারেন। বিভিন্ন কোম্পানির এড প্রদর্শনের কারনে পাবলিশাররা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পেয়ে থাকেন। গুগল যে পরিমান অর্থ বিজ্ঞাপন প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে নিয়ে থাকে তার মাত্র ৬৮% পাবলিশাররা পেয়ে থাকেন।
ইউটিউবে এডসেন্স:
যারা ইউটিউব চ্যানেলে গুগল এডসেন্সের এড প্রদর্শন করাতে চান তাদের প্রাথমিক কিছু যোগ্যতা বা শর্তাবলি পুরণ করে ইউটিউবে এডসেন্স এপ্রুভাল নিতে হয়। এক্ষেত্রে এটিকে মনেটাইজেশন বা ইউটিউবে এডসেন্স যোগ করা বলা হয়। সাধারণত মনেটাইজেশন করার পর ভিডিও আপলোড দেওয়ার সময়, বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করার জন্য বিভিন্ন বিজ্ঞাপন সেট করে নিতে হয়। কেউ চাইলে গুগলের স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিও অনুসরণ করতে পারেন। ইউটিউবে এডসেন্স এপ্রুভাল পেলে, ভিডিও দেখার সময় তার নিচে কিংবা পাশেই গুগল এডসেন্সের বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হয়। ইম্প্রেশন, ক্লিক ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে একজন ইউটিউব চ্যানেলের মালিককে অর্থ প্রদান করা হয়।
এপ্রুভাল বা মনেটাইজেশন পেতে যোগ্যতা:
সাধারণত ইউটিউব চ্যানেলে মনেটাইজেশন বা গুগল এডসেন্স এপ্রুভাল পেতে হলে গুগলের কিছু শর্ত পূরণ করতে হয় যেমন:
- ইউটিউব চ্যানেলটির সর্বনিম্ন এক হাজার সাবস্ক্রাইবার থাকতে হবে।
- ওয়াচ টাইম তথা চ্যানেলটি দ্বারা আপলোডকৃত ভিডিওগুলো সর্বমোট ৪০০০ ঘন্টার অধিক সময় ভিউয়ার দ্বারা দেখতে হবে।
এক্ষেত্রে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, রিয়েল ভিউয়ার ছাড়া অন্যকোন উপায়ে ভিউ আনার চেষ্টা করলে আপনার ইউটিউব চ্যানেলটি বাতিল হয়ে যেতে পারে।
এই দুটি শর্ত পূরণ হলেই একজন চ্যানেল মালিক তার চ্যানেলকে মনেটাইজেশন বা গুগল এডসেন্সে এপ্রুভাল করাতে পারবেন।
ভিডিও কন্টেন্ট নীতিমালা:
ইউটিউবে ভিডিও আপলোডের ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই কিছু নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে যেমন, অন্যের ভিডিও আপনার চ্যানেলে আপলোড করা যাবে না। গুগল বর্তমানে কপিরাইটের ক্ষেত্রে অনেকটাই কড়াকড়ি আরোপ করেছে। যেকোন ভিডিও এডিটিং করার পরেও গুগল এটিকে কপিরাইট হিসেবে ধরার ক্ষমতা রাখে। আপনাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, অন্যের ভিডিও চুরি করে কোনভাবেই ইউটিউবে আপলোড করা যাবেনা। গুগল এটি ধরতে পারলে, আপনার চ্যানেলটিকে কপিরাইট ক্ল্যাইম করে ব্যান করে দিতে পারে। এছাড়াও এডাল্ট ভিডিও, সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক কোন ভিডিও ইউটিউবে আপলোড করা যাবেনা।
কত ভিউ এর জন্য কত আয়:
সাধারণত ইউটিউব ভিউ এর উপর আপনার আয় নির্ভর করে না কারণ গুগলের এডসেন্সটি সিপিসি বা কস্ট পার ক্লিক এর উপর ভিত্তি করে তৈরী করা অর্থাৎ প্রতিটি ক্লিকের উপর ভিত্তি করে আপনি অর্থ পাবেন। তবে ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে সিপিসি রেট অনেক পরিবর্তন হয় যেমন বাংলাদেশ থেকে একটি ক্লিকের জন্য যদি ৫ টাকা আয় হয় তবে আমেরিকান একজন ভিজিটরের ক্লিকে আপনার আয় হতে পারে ১০০ টাকা।
পেমেন্ট পদ্ধতি:
গুগল এডসেন্স পেপাল, মাস্টার কার্ড, ব্যাংকের মাধ্যমে পেমেন্ট করে থাকে। বাংলাদেশ থেকে যেহেতু পেপাল গ্রহণযোগ্য নয় সেহেতু আপনি চাইলে আপনার পেমেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে উত্তোলন করতে পারেন এবং এটি ই বাংলাদেশ থেকে সহজ পদ্ধতি।
একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ কয়টি এডসেন্স একাউন্ট খুলতে পারবে?
অবশ্যই একজন ব্যক্তির ক্ষেত্রে কেবল একটি এডসেন্স একাউন্ট ই গ্রহণযোগ্য। গুগল এটিকে অনেকটা প্রাধান্য দিয়ে দেখে থাকে। এক ব্যাক্তির দুই বা ততোধিক এডসেন্স একাউন্ট থাকলে গুগল ঐ ব্যাক্তির সকল এডসেন্স একাউন্ট ই বাতিল করে দিতে পারে। যে কেউ চাইলে একটি এডসেন্স একাউন্টে দুই বা ততোধিক চ্যানেল মনেটাইজেশন করতে পারেন, সেক্ষেত্রে একজনের দুটি এডসেন্স একাউন্টের কোন প্রয়োজন নেই।
যৌথ মালিকানাধীন একাউন্টের ক্ষেত্রে একাধিক একাউন্ট গ্রহণ যোগ্য।
ইউটিউব থেকে মাসে কত টাকা ইনকাম করা যায়:
এটি নির্ভর করবে আপনার ভিডিও কোয়ালিটি আর মানের উপর। ভালো মানের ভিডিও হলে ভিউয়ার বেশি হবে আর ভিউয়ার বেশি হলে ইনকাম বেশি হবে এটাই স্বাভাবিক। অনেক ইউটিবার আছেন যারা ইউটিউব থেকে লাখ লাখ টাকা ইনকাম করছেন।
গুগল এডসেন্স পাওয়ার পর আপনাকে অবশ্যই গুগলের নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে। গুগল এডসেন্সের নীতিমালা মেনে ভিডিও আপলোড করলে এবং কন্টেন্ট কোয়ালিটি ভালো হলে আপনি অবশ্যই সফল হবেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে মাসে কত টাকা ইনকাম হবে সেটা নিয়ে ভাবতে হবে না।
গুগল এডসেন্স ছাড়া অন্যকোন এড কোম্পানি আছে কিনা:
গুগল এডসেন্স ছাড়া আরও বেশ কিছু এড নেটওয়ার্ক আছে যার মাধ্যমেও আপনার ভিডিওতে বিজ্ঞাপন দিতে পারবেন কিন্তু গুগল এডসেন্স সবার সেরা। এটির সাথে অন্যদের তুলনা করা চলেনা তবে বিশেষ ক্ষেত্রে প্রয়োজন হলে ডেইলি মোশনের মত প্লাটফর্মগুলো ব্যবহার করতে পারেন।