খালেদা জিয়ার শিক্ষাগত যোগ্যতা ও জন্ম তারিখ বিতর্ক

খালেদা জিয়ার শিক্ষাগত যোগ্যতা ও জন্ম তারিখ বিতর্ক

www.dhakastaff.com

খালেদা জিয়ার শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে অনেক সময় অনেক কথা শুনা যায়। কেউ বলেন এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন কিন্তু পাশ করতে পারেন নি আবার অনেকেই বলেন, অষ্টম শ্রেণি পাশ। বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী তার যেকোন কাজে, শিক্ষাগত যোগ্যতার স্থানে স্বশিক্ষিত লিখেন যেকারণে তার শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেন। চলুন আজকে জেনে নেয়া যাক, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শিক্ষাগত যোগ্যতা কতটুকু এবং সেই সাথে চলুন জেনে নেই আমাদের কিছু নৈতিকতার ঘাটতি সম্পর্কে যা ভবিষ্যতে অনেকরই কাজে দিবে।

বেগম খালেদা জিয়ার জন্ম তারিখ:

বর্তমানে বিভিন্ন কাগজপত্র ও গুরুত্বপূর্ণ নথিতে দেখা যায়, বিএনপির চেয়ারপার্সন এবং বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্ম ১৯৪৫ সালের ১৫ই আগস্ট। বেগম খালেদা জিয়ার এ জন্ম তারিখটি নিয়ে অনেকেই সংশয় প্রকাশ করেন। বিশেষ করে আওয়ামিলীগ সমর্থকদের একাংশ খালেদা জিয়ার জন্ম তারিখটিকে মানতে চান না। আওয়ামিলীগ সমর্থকদের না মানার পেছনের কারণটি অবশ্য বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায় বলে বিবেচিত।  ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিপথগামী কিছু সেনার হাতে স্বপরিবারে নিহত হন। দিন ও মাসের তারিখটি খালেদা জিয়ার জন্ম তারিখের সাথে মিলে যাওয়ায়, আওয়ামী সমর্থকরা ১৫ই আগস্ট খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালনে বরাবরই ক্ষোভ প্রদর্শন করেন। জানতে চাইলে মাসুদুর রহমান ঢাকা স্টাফকে জানান, ১৫ই আগস্ট বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন হওয়ায়, তিনি সেদিন জন্মদিন পালনের অধিকার রাখেন। এতে সরকার কিংবা অন্যকারো বাধা দেওয়ার ক্ষমতা নেই কিন্তু যেহেতু বেগম খালেদা জিয়া সাধারণ কোন ব্যক্তি নন, তিনি একজন রাজনৈতিক দলের চেয়ারপার্সন সেই কারনে ১৫ই আগস্ট তার জন্মদিন পালনে কিছুটা দৃষ্টিকটুতার তৈরী হয়।
তিনি আরও যোগ করেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী ১৫ই আগস্ট হওয়ায় খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালনটি আওয়ামিলীগ সমর্থকদের ব্যাথিত করে তবে সবাইকে আগে যে কথাটি মনে রাখতে হবে সেটি হলো, জন্মদিন পালন যার যার ব্যক্তিগত অধিকার। ব্যক্তিগত অধিকারের উপর বল প্রয়োগ করার অধিকার কারো নেই। তিনি আরও বলেন, বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকী হওয়ায় তিনি ১৯৯৫-৯৬ সালের পূর্বে ১৫ই আগস্ট জন্মদিন পালন করতেন না। হঠাৎ করেই কেন তিনি ১৫ই আগস্ট জন্মদিন পালন শুরু করলেন জানতে চাইলে মি. মাসুদ জানান, বিএনপি তে এখন যেসব নেতারা শীর্ষস্থান দখল করে আছেন তাদের অনেকেই তোষামোদে ব্যস্ত থাকেন। এদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বেগম খালেদা জিয়া জন্মদিন ১৫ই আগস্ট পালন করতে পারেন বলে মত দেন তিনি।

খালেদা জিয়ার জন্ম তারিখ কয়টি?

এ যাবৎ বেগম খালেদা জিয়ার চারটি জন্ম তারিখ পাওয়া গেছে। বর্তমানে যে জন্ম তারিখটি (১৫ই আগস্ট) খালেদা জিয়ার বিভিন্ন ডুকুমেন্টে পাওয়া যায় সে জন্ম তারিখটি বেগম খালেদা জিয়া সরকারের আমলে ইস্যু করা কোন পরিচয়পত্রের মত গুরুত্বপূর্ণ ডুকুমেন্টে পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন ফাইল এবং অতীত রেকর্ড ঘেটে দেখা যায়:
  • ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় বেগম খালেদা জিয়ার জন্ম তারিখ ৯ই আগস্ট ১৯৪৫।
  • বিবাহের সনদপত্রে জন্ম তারিখ ৫ই সেপ্টেম্বর ১৯৪৫।
  • খালেদা জিয়ার পাসপোর্টে জন্ম তারিখ ১৯ই আগস্ট ১৯৪৫।
খালেদা জিয়ার ভিন্ন ভিন্ন যায়গায় ইস্যু করা ভিন্ন ভিন্ন জন্ম তারিখ হওয়ায় অনেকেই তার প্রকৃত জন্মদিন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন। জানতে চাইলে মাসুদুর রহমান জানান, ১৯৪৫ সালে মানুষের জন্মদিন মনে রাখার ব্যাপারটা মোটামুটি অপ্রচলিতই ছিল ধরা যায়। সেক্ষেত্রে বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন টি এদিক সেদিক হওয়াতে তিনি অবাক নন বলে জানান। তিনি এটিকে স্বাভাবিকই মনে করেন এবং তিনি যোগ করেন, রাজনীতিতে এমন অনেক মানুষ আছেন যারা তাদের প্রকৃত জন্মদিনটি জানেন না। সেক্ষেত্রে তারাও একটি না একটি দিন ধরে জন্মদিন পালন করছেন। তিনি মনে করেন, ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকী না হলে হয়তো বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন নিয়ে এতটা বিতর্কের তৈরী হত না। বেগম খালেদা জিয়া নিজেকে বিতর্কের উর্ধ্বে রাখতে তার জন্মদিনটি ১৫ই আগস্ট পালন করবেন না বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করেন মি. মাসুদ। তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া যতবারই ১৫ই আগস্ট জন্মদিন পালন করতে যাবেন ততবারই তার জন্মদিন নিয়ে কথা উঠবে যা অনভিপ্রেত। 

বেগম খালেদা জিয়ার শিক্ষাগত যোগ্যতা:

বাংলাদেশের সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেন আবার কেউ বা তার শিক্ষাগত যোগ্যতাকে বাহাস করেন। বিশেষ করে আওয়ামিলীগ সমর্থকদের একটি বিরাট অংশ বেগম খালেদা জিয়ার শিক্ষাগত যোগ্যতাকে খাটো করে দেখেন। পুরনো বিভিন্ন নথিতে দেখা যায়, বেগম খালেদা জিয়া তার শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি পাশ হিসেবে উল্ল্যেখ করেছেন। তবে বর্তমানে তিনি নিজেকে "স্বশিক্ষিত" শব্দ দ্বারা নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রকাশ করেন। "স্বশিক্ষিত" দ্বারা কি বুঝানো হয়েছে জানতে চাইলে মি. মাসুদ জানান, এই শব্দটি আসলে একেবারেই নতুন। বেগম খালেদা জিয়া হয়তো এটি দ্বারা "নিজ থেকে জ্ঞান অর্জন" করেছেন এমনটা বুঝাতে পারেন।

বিতর্কের অবসান হবে কি না:

খালেদা জিয়াকে নিয়ে বিতর্কের অবসান হবে কি না জানতে চাইলে মাসুদুর রহমান জানান, বাংলাদেশে এই ধরনের ইস্যুগুলো ব্যাক্তি যতদিন বেচে থাকেন ততদিন শেষ হয় না। যেহেতু বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক দল বিএনপির  প্রধান সেহেতু এই বিতর্কের অবসান হওয়ার সম্ভাবণা ক্ষীণ। এসব বিতর্কের ভবিষ্যৎ কি জানতে চাইলে তিনি জানান, ভবিষ্যত এই যে এগুলোর বিনিময়ে আমাদের দেশের রাজনীতিতে চাঙ্গা ভাব বজায় থাকবে।

নৈতিক দিক থেকে আমাদের অবস্থান:



একজন মানুষের জন্মদিন কিংবা শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি করা চূড়ান্ত নৈতিক অবক্ষয়ের মধ্যে পড়ে বলে জানান মি. মাসুদ। তিনি বলেন, মানুষের শিক্ষাগত যোগ্যতাটা মুখ্য ব্যাপার নয়। মুখ্য ব্যাপার তার কর্মটা। কর্মে যে বড় সে ই প্রকৃত বড়। পৃথিবীতে এমন অনেক মনিষী আছেন যাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা বলতে তেমন কিছুই ছিল না। তিনি কবি কাজী নজরুল ইসলামকে উদাহরণ হিসেবে টেনে বলেন, কবি কাজী নজরুল ইসলাম মাত্র ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা দিয়েছিলেন কিন্তু তার কর্ম তাকে তার চেয়েও হাজারগুণ এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। বেগম রোকেয়া, উইনস্টন চার্চিল, মার্ক টোয়াইনদের মত অল্প শিক্ষিতদের দেখিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে উপহাস করার কিছু নেই।