কিস্তিতে ল্যাপটপ : ক্রেডিট কার্ড ও জামানত ছাড়া কিস্তিতে ল্যাপটপ কিনবেন যেভাবে

কিস্তিতে ল্যাপটপ : ক্রেডিট কার্ড ও জামানত ছাড়া কিস্তিতে ল্যাপটপ কিনবেন যেভাবে

বর্তমান সময়ে একজন শিক্ষার্থীর জন্য ল্যাপটপ থাকা প্রায় আবশ্যক কিন্তু এই অতিপ্রয়োজনীয় পণ্যটি কিনতে একসাথে অনেক টাকার প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করে দেখা যায়; অনেক শিক্ষার্থী বা অবিভাবক আছেন যাদের পক্ষে একসাথে এত টাকা ম্যানেজ করে ল্যাপটপ কেনা সম্ভব নয়।



শুধু যে কেবল একজন শিক্ষার্থীর ল্যাপটপের প্রয়োজন হয় তাও নয় বরং আউটসোর্সিং এর মত কাজ কিংবা ছোট খাটো অফিসের কাজ করতে গেলেও একটি ল্যাপটপের প্রয়োজন হয় যা নিম্নবিত্ত বা মধ্যবিত্তদের জন্য একমুঠো টাকা ব্যায়ে কেনা সম্ভব হয়না। এক্ষেত্রে বাধ্য হয়ে অনেকে কিস্তিতে ল্যাপটপ কেনার চিন্তা করেন বা হন্যে হয়ে কিস্তিতে ল্যাপটপ কেনার উপায় খোজেন।

আজকের আলোচ্য বিষয়-
  • কিস্তিতে ল্যাপটপ কেনার সুবিধা ও অসুবিধা
  • কিস্তির প্রকারভেদ
  • কিস্তিতে ল্যাপটপ কোথায় পাবেন
  • কিভাবে কিস্তিতে ল্যাপটপ কিনতে হয়
  • কিস্তির টাকা না দিতে পারলে করণীয় কি
  • কিস্তিতে কোন ব্রান্ডের ল্যাপটপ কিনবেন

কিস্তিতে ল্যাপটপ কেনার সুবিধা ও অসুবিধা

আর্থিকভাবে যারা তেমন স্বচ্ছল নয় কিন্তু ল্যাপটপ কেনা খুবই জুরুরী তারাই কেবল কিস্তির মাধ্যমে ল্যাপটপ কেনার চিন্তা করেন। বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত মানুষেরাই কিস্তিতে ল্যাপটপ ক্রয় করে থাকেন। কিস্তিতে ল্যাপটপ ক্রয়ের ক্ষেত্রে যেসকল সুবিধা রয়েছে তার মধ্যে আছে-
  • একমুঠে বিশাল অংকের টাকা পরিশোধ করতে হয়না৷
  • পছন্দমতো ভালো কনফিগারেশনের ল্যাপটপ কেনা যায়।
  • অনেক শিক্ষার্থী টিউশনি করিয়েও ল্যাপটপ কিনে ফেলতে পারেন।
  • ঋণ না করে বরং প্রতিমাসে খরচ বাঁচিয়ে ল্যাপটপ ক্রয় করা যায়।

কিস্তিতে যেকোন পণ্য ক্রয় করার মধ্যেই উপরোক্ত সুবিধাগুলো রয়েছে। এই সুবিধা সমূহের বিপরীতে কিস্তিতে ল্যাপটপ কেনার ক্ষেত্রে অনেক অসুবিধাও রয়েছে যেমন-
  • কিস্তিতে ল্যাপটপ তেমন পাওয়া যায়না।
  • কিস্তিতে ল্যাপটপ কেনার ক্ষেত্রে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ক্রেডিটকার্ড লাগে যা মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্তদের থাকেনা।
  • প্রচুর ঝামেলা পোহাতে হয় যার কারণে অনেকেই কিস্তিতে পণ্য ক্রয় পরিহার করেন।
  • অনেকক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে উচ্চ মুনাফা দিতে হয়।
  • কিস্তির টাকা দিতে না পারলে অনেকসময় হয়রানির কবলে পড়তে হয় যা নিয়ে আমরা এই ব্লগেই আলোচনা করেছি।

এক্ষেত্রে মোদ্দাকথা হলো, সুবিধাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে কিংবা সহজলভ্যতার ক্ষেত্রে কিছু ধকল আপনাকে মেনে নিতে হবে। যদি কিস্তিতে ল্যাপটপ ক্রয় করা জুরুরী হয়ে যায় তবে সেক্ষেত্রে অসুবিধার দিকে ফোকাস না করে বরং সুবিধাগুলোর দিকে নজর দিন।

কিস্তি পরিশোধের সামর্থ্য থাকলেই কেবল কিস্তিতে ল্যাপটপ কেনার স্বপ্ন দেখা উচিত নচেৎ ল্যাপটপ ক্রয় করার পর ঝামেলায় পড়ার ঝুঁকি তৈরী হবে৷

কিস্তির প্রকারভেদ 

বাংলাদেশে বিভিন্ন রকম কিস্তি সুবিধা প্রচলিত রয়েছে। কিস্তিতে ল্যাপটপ কিনতে চাইলে প্রতিটি কিস্তি সম্পর্কে আইডিয়া রাখা উচিত নতুবা ল্যাপটপ কেনা তো হবেই না বরং অযথা হয়রানির শিকার হতে হবে। যেসকল কিস্তি সুবিধা বাংলাদেশে রয়েছে সেগুলো হলো-

  • জামানতের উপর কিস্তি: এক্ষেত্রে কিস্তিতে পণ্য ক্রয় করতে চাইলে বিক্রেতার কাছে একটি নির্দিষ্ট মূল্যের বেশি সম্পদ জামানত বা গচ্ছিত রাখতে হবে। সেটি হতে পারে জমির দলিল কিংবা অন্যকিছু। এক্ষেত্রে কিস্তি পরিশোধের নিশ্চয়তার জন্য মাসিক ইনকামের শর্ত জুড়ে দেয় বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান।

  • ডেবিট/ক্রেডিট কার্ডের উপর কিস্তি: বাংলাদেশে এই কিস্তি সুবিধাটি ব্যাপকভাবে প্রচলিত৷ কারো যদি কোন ব্যাংকের ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড থাকে তবে সেই কার্ড সুবিধা কাজে লাগিয়ে কিস্তিতে পণ্য ক্রয় করা যায়৷ ডেবিটকার্ড বা ক্রেডিটকার্ডকে সাধারণ মাস্টারকার্ডও বলা হয়। মাস্টারকার্ড সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে নিচের লিংকটির সাহায্য নিতে পারেন।


  • ক্রেডিটকার্ড ও জামানতবিহীন কিস্তি সুবিধা: এক্ষেত্রে কিস্তি সুবিধা পেতে কোনরকম জামানত বা ব্যাংক কার্ডের প্রয়োজন হয়না৷ দু'য়েকটি বৈধ কাগজপত্র এবং এক বা একাধিক গ্যারান্টার পেলেই ব্যাংকের কার্ড ও জামানত ছাড়াই খুব কিস্তি সুবিধা পাওয়া পাওয়া যায়।

জামানতবিহীন কিস্তি সুবিধা ঝুঁকিপূর্ণ বিধায় হাতেগোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া আর কেউ এরকম কিস্তি সুবিধা দেয়না। ঢাকা স্টাফের ব্লগে জামানতবিহীন কিস্তিতে ল্যাপটপ ক্রয়ের উপায় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।


জামানতবিহীন কিস্তিতে ল্যাপটপ কোথায় পাওয়া যায়

জামানত এবং ক্রেডিট কার্ড ছাড়া এমন অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যারা ল্যাপটপ বিক্রি করে। যেহেতু বিশ্বস্ততার ব্যাপার রয়েছে সেহেতু ঢাকা স্টাফের পক্ষ থেকে আমরা কেবল তিনটি প্রতিষ্ঠানকে আপনাদের কাছে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই-

  • সিংগারের জামানতবিহীন কিস্তি সুবিধা: সিংগার সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলবার নেই। বাংলাদেশে ইলেকট্রনিকস পণ্যের ব্র‍্যাণ্ড হিসেবে সিংগার তার যায়গা অনেক আগেই অর্জন করে নিয়েছে। সিংগার থেকে যে কেউ চাইলেই ৬-১২ মাসের কিস্তিতে ল্যাপটপ কিনতে পারে।

  • ওয়ালটনের জামানতবিহীন কিস্তি সুবিধা: বাংলাদেশী জায়ান্ট ইলেকট্রনিকস প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন। বর্তমানে ওয়ালটন নিজেদের তৈরীকৃত ল্যাপটপ বাজারে ছেড়েছে কিস্তি সুবিধাসহ। ওয়ালটনের ল্যাপটপ কিনতে চাইলে সহজেই তাদের আউটলেট থেকে ল্যাপটপ ক্রয় করা যাবে।

  • বেস্ট ইলেক্ট্রনিকস: বাংলাদেশে ইলেকট্রনিকস পণ্যের নামকরা বিক্রেতা হলো বেস্ট ইলেক্ট্রনিকস। এলজি, সিংগার, সামস্যাং এর যেকোন পণ্য এই প্রতিষ্ঠানটি কিস্তির মাধ্যমে বিক্রি করে থাকে। এইচপি কিংবা ডেলের মত ল্যাপটপও এদের আউটলেট থেকে কিস্তিতে পাওয়া যায়।

আপনার আশেপাশে অনেক লোকাল বিক্রেতা আছে যারা জামানত ছাড়াই কিস্তিতে ল্যাপটপ বিক্রি করে থাকে। এদের ক্ষেত্রে দেখা যায়- এরা ল্যাপটপের বাজারমূল্য থেকে বেশি টাকা ধরে আপনার কাছে বিক্রি করে। বিশ্বস্ত না হলে এরা কিস্তিতে ল্যাপটপসহ যেকোন ইলেক্ট্রনিকস পণ্য বিক্রি করে না। 

কিভাবে কিস্তিতে ল্যাপটপ কিনবেন?

সিংগার থেকে কিভাবে ল্যাপটপ কিস্তিতে ক্রয় করবেন সেটি নিয়ে আজকে আমরা বিস্তারিত তুলে ধরছি৷ প্রথমেই সিংগারের ওয়েবসাইটে গিয়ে তারা যে ল্যাপটপগুলো কিস্তিতে বিক্রি করে সেগুলো দেখে আসুন।


বলাবাহুল্য যে, সকল ব্রান্ডের ল্যাপটপ সিংগার কিস্তিতে বিক্রি করেনা। কিস্তিতে তারা ডেল কিংবা আরও দু'য়েকটি ব্রান্ডের ল্যাপটপ কিস্তিতে বিক্রয় করে। আপনারা তাদের ওয়েবসাইটে গিয়ে কিস্তি সুবিধা আছে এমন ল্যাপটপগুলোর দাম জেনে নিন৷ পছন্দমতো ল্যাপটপ বাছাই করে; ল্যাপটির মডেল খাতায় লিখে রাখুন।

এবার আপনার নিকটস্থ সিংগারের আউটলেটে যান। সিংগারের আউটলেটে যাওয়ার সময় একজন গ্যারান্টার এবং সেই সাথে উভয়ের ভোটার আইডি কার্ড এবং পাসপোর্ট সাইজের দুই কপি ছবি সঙ্গে রাখুন। সিঙ্গারের যেকোন পণ্য কিস্তিতে কিনতে হলে ৪০% ডাউনপেমেন্ট অর্থাৎ ৪০% দাম অগ্রীম দিতে হয়। আপনার বাছাইকৃত ল্যাপটপটির মূল্য অনুযায়ী ৪০% টাকা সঙ্গে রাখুন। 

সিংগারের আউটলেটে গিয়ে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাকে ল্যাপটপের মডেল নাম্বারটি বলুন যে, এই মডেলের ল্যাপটপটি তাদের আউটলেটে এভইলেবল কি'না। যদি এভেইলেবল থাকে তবে উনাকে কিস্তির কথা বলুন। উনি গ্যারান্টারের স্বাক্ষরসহ সকল কিছু পূরণ করে আপনাকে ল্যাপটপ দিয়ে দিবেন। কিস্তির টাকা পরিশোধের জন্য ব্যাংক বা সেই আউটলেটে জমা দেওয়ার জন্য বলবেন।

যদি কোন কারণে আপনার বাছাইকৃত ল্যাপটপটি সেই আউটলেটে না থাকে তাহলে অন্য আরেক নিকটস্থ আউটলেটে গিয়ে দেখতে পারেন অথবা আপনার নিকটস্থ সিঙ্গার আউটলেটের কর্মকর্তাকে রিকুয়েষ্ট করতে পারেন যেন; ঐ মডেলের ল্যাপটপটি সেই আউটলেটে এভেইলেবল করা হয়। এতে আপনাকে কয়েকদিন অপেক্ষা করা লাগতে পারে।

কিস্তির টাকা দিতে না পারলে করণীয় কি

পূর্বেই বলা হয়েছে যে, কিস্তিতে পণ্য কেনার আগে অবশ্যই আপনাকে কিস্তি পরিশোধের সামর্থ্য বিবেচনা করতে হবে। আপনার মাসিক আয় কত কিংবা মাসিক আয়টি পার্মানেন্ট কি'না সেটি সম্পর্কে ভাবতে হবে। আপনি যে মাসে ল্যাপটপ কিনবেন তার পরবর্তী মাস থেকেই কিস্তি পরিশোধ করতে হবে।

মাসে আয় ব্যয়ের হিসাব মিলিয়ে তারপর কিস্তিতে পণ্য কিনুন। তারপরও যদি কোন কারণে কিস্তি দিতে অপরাগ হন তাহলে কিস্তিদাতা প্রতিষ্ঠান চাইলে ২/১মাস কিস্তি গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে পারেন। তারপরও যদি কিস্তি পরিশোধ না করেন তবে যেকোন সময় কিস্তিদাতা প্রতিষ্ঠান আপনার নামে ঋণখেলাপীর মামলা করে দিতে পারেন।

ঋণখেলাপীর মামলার কিছু নিয়মতান্ত্রিক সাজা রয়েছে। তারচেয়েও বড় কথা, ঋণখেলাপীর মামলায় পড়লে অহেতুক হয়রানির শিকার হবেন। একবার নিজের নামে ঋণখেলাপীর তকমা জুটলে পরবর্তীতে যেকোন ব্যাংক থেকে লোন নেওয়াও কঠিন হয়ে যাবে। সুতরাং কোনভাবেই ঋণ পরিশোধের শতকরা একশো ভাগ সক্ষমতা নিশ্চিত না হয়ে কিস্তিতে কোন পণ্যই কিনবেন না।

কোন ব্রান্ডের ল্যাপটপ কিনবেন

কিস্তিতে ল্যাপটপ কেনার ক্ষেত্রে কোন ব্রান্ডের ল্যাপটপ কিনবেন তার স্বাধীনতা পাবেন না৷ যদি ইএমআই সুবিধা অর্থাৎ ক্রেডিটকার্ড দিয়ে কিস্তির মাধ্যমে ল্যাপটপ কিনতে চান সেক্ষেত্রে পাবেন। এছাড়াও লোকাল কিংবা বেস্ট ইলেক্ট্রনিকস থেকেও তাদের স্টোরে থাকা ব্রান্ড অনুযায়ী ল্যাপটপ কিনতে পারবেন।

বর্তমান বাজারে অ্যাপল এর পর এইচপি ভালো অবস্থানে রয়েছে সাশ্রয়ী মূল্যের দিক থেকে। ডেল কিংবা আসুস অথবা লেনেভো যেকোন ব্রান্ডের ল্যাপটপ ই ভালো। আপনি আপনার বাজেট অনুযায়ী  ল্যাপটপ সিলেক্ট করবেন। বর্তমানে শাওমিও ল্যাপটপ বাজারে এনেছে কিন্তু দাম লক্ষাধিক। মুদ্দাকথা, আপনার হাতের নাগালে সামর্থ্য অনুযায়ী ল্যাপটপ পছন্দ করে কিনতে পারেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

13 মন্তব্যসমূহ

  1. ঢাকা কুড়িলে কোনো শোরুম এর এড্রেস দিন প্লিজ...

    উত্তরমুছুন
  2. আমি যদি মুল দামের এক তৃতীয়াংশ পরিশোধ করি তাহলে বাকী টাকার উপরে সুদ দিতে হবে।

    উত্তরমুছুন
  3. আমি যদি ৫০ হাজার টাকার পন্য কিনে ১০ হাজার টাকা সাথে সাথেই জমা দিয়ে দেই তাহলে আমি মাসিক কত টাকা করে কিস্তি দিতে হবে এবং কত % সুদ দিতে হবে।৩ মাস পর থেকে কিস্তি চালু হলে ভালো হবে।

    উত্তরমুছুন
  4. কিশোরগঞ্জ শো রুম আছে কি

    উত্তরমুছুন
  5. আসসালামু আলাইকুম খুব খুব ইমিডিয়েটলি আমি একটা ল্যাপটপ নিতে চাই প্লিজ help me 🙏আমি 50% টাকা অ্যাডভান্স দিয়ে নিতে চাই

    উত্তরমুছুন
  6. ঢাকা কোন জায়গা রুম আছে??

    উত্তরমুছুন