আইপিএল নাকি বিশ্বকাপ? আইপিএলের এত জনপ্রিয়তার নেপথ্যে কারণ জেনে নিন

আইপিএল নাকি বিশ্বকাপ? আইপিএলের এত জনপ্রিয়তার নেপথ্যে কারণ জেনে নিন

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ বা সংক্ষেপে "আইপিএল"কে ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আসর  হিসেবে গণ্য করা হয়। "ক্রিকেট বিশ্বকাপ" অপেক্ষাও আইপিএলের জনপ্রিয়তা বেশি বলেই মনে করেন অনেকে। ঢাকা স্টাফের আজকের কলামে আইপিএল বা ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগের জনপ্রিয়তা এবং সেই সাথে বিশ্বকাপ অপেক্ষা আইপিএল জনপ্রিয় কি'না তার আলোচনা তুলে ধরা হলো।


করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থা "আইসিসি" ২০২০ সালের অনুষ্ঠিতব্য "টি২০ ক্রিকেট বিশ্বকাপ" বাতিলের ঘোষণা দিলেও ভারতের ক্রিকেট বোর্ড "বিসিসিআই" আইপিএল বাতিল করেনি বরং যেকোন উপায়ে আইপিএল মাঠে গড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত না হলেও আইপিএল মাঠে গড়াবে- ব্যাপারটি অনেক ক্রিকেটপ্রেমিকে আশ্চর্য বানিয়ে দিয়েছে।

কি এমন কারণ রয়েছে যার জন্য ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড যেকোন উপায়ে আইপিএল মাঠে গড়ানোর সিদ্ধান্তে অনড়? আইসিসি পিছু হটলেও বিসিসিআই কেন পিছু হটছে না? চলুন দেখে নেয়া যাক, ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ তথা আইপিএলের জনপ্রিয়তা আকাশ্চুম্বী হওয়ার পেছনের কয়েকটি কারণ।

বাঘা বাঘা খেলোয়াড়দের অংশগ্রহণ

কে থাকেন না ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ আইপিএলে? ভিরাট কোহলি, ডেবিড ওয়ার্নার কিংবা ক্রিস গেইলদের মত বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানদের থেকে শুরু করে ট্রেন্ট বোল্ট, লাসিথ মালিঙ্গাদের মতো বিশ্বমানের বোলাররা এই ক্রিকেট টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে।

এছাড়াও সাকিব আল হাসান, বেন স্টোকসদের মতো বিশ্বসেরা অলরাউন্ডাররাও অংশগ্রহণ করে আইপিএলে৷ বিশ্ব ক্রিকেট তারকাদের প্রায় সকলেই আইপিএলে অংশগ্রহণ করার ফলে ক্রিকেটে ছোট্ট এই সংস্করণে লড়াই জমে ধুমধাম৷

বর্তমান বিশ্ব তারকা খেলোয়ারদের পাশাপাশি সাবেক মহাতারকারাও কোন না কোনভাবে আইপিএলে অংশগ্রহণ করেন। টম মুডি, সাঙ্গাকারাদের মত মহারথীদের কোচ হিসেবে খেলোয়াড়দের ড্রেসিং রুমে দেখা যায় আবার নাসের হুসেইনের মতো জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকারদের দেখা যায় মাইক হাতে।

এই সাবেক-বর্তমান রথী মহারথীদের মিশেলে আইপিএল জমজমাট রুপ ধারণ করে এবং এই কারণেই আইপিএলের জনপ্রিয়তা যেকোন ক্রিকেট টুর্নামেন্টে অপেক্ষা বেশি এবং বরাবরই জনপ্রিয়তার তুঙ্গে।

সকল দেশের সমর্থকদের দৃষ্টি

আইসিসি ক্রিকেট ওয়ার্ল্ডকাপ কেবল টেস্ট খেলোড়ে কয়েকটি দেশ নিয়ে হলেও আইপিএলে প্রায় সকল দেশেরই কমবেশি প্রতিনিধি থাকে। নেপালের লামিচ্চানে থেকে শুরু করে নেদারল্যান্ডসের টেনডেস্কাট, এরকম প্রায় সকল দেশেরই কমবেশি দু'য়েকজন তারকা খেলোয়াড় আইপিএলে অংশগ্রহণ করে।

প্রায় প্রতিটি দেশ থেকে এরকম দেশসেরা ক্রিকেটার অংশগ্রহণ করে বিধায়, সেসকল দেশের মানুষেরা আইপিএলে স্বদেশী খেলোয়াড় যে দলে সে দলকে সাপোর্ট করেন৷ উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশি ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান কিংবা মুস্তাফিজের কথাই চিন্তা করুন। সাকিব আল হাসান কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে খেলার সুবাধে বাংলাদেশের অধিকাংশ ক্রিকেটপ্রেমিরা আইপিএলে কলকাতাকে সাপোর্ট করেছে। কলকাতার খেলা হলে সাকিব সাকিব জয়োধ্বনি তুলেছে।

মুস্তাফিজুর রহমানের সানরাইজার্স হায়দারাবাদ যাওয়ার সুবাধে বাংলাদেশের এক বিরাট অংশ হায়দারাবাদকে সাপোর্ট করেছে। ঠিক এরকমভাবেই, পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশ যেখানে ক্রিকেট খেলা জনপ্রিয় সেই দেশের খেলোয়ার কিংবা স্টাফ আইপিএলে অংশগ্রহণ করার কারণে টুর্নামেন্টটি পৃথিবীজুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

অন্য যেকোন টুর্নামেন্ট বা সূচী না থাকা

আইপিএল এত জনপ্রিয় কেন? এর মূলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে ব্যাপারটি রয়েছে সেটি হচ্ছে- আইপিএল চলাকালীন অন্য যেকোন ক্রিকেট টুর্নামেন্ট বা দুই দেশীয় বা ত্রিদেশীয় এরকম কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচ না থাকা৷ ব্যাপারটি অনেকটাই কৌতুহল সমৃদ্ধ। যেহেতু আইপিএল খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং ঝাকঝমকপূর্ণ টুর্নামেন্টের তকমা পাওয়া সেহেতু প্রায় প্রতিটি দেশের সেরা খেলোয়াড়দের প্রথম পছন্দ থাকে আইপিএলের মতো টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করা।

পূর্বে আইপিএল চলাকালীন সময় আন্তর্জাতিক দুই একটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হলেও বর্তমানে আইসিসি আইপিএল চলাকালীন কোন ম্যাচই রাখে না। এমনকি আইপিএলের সূচী ঠিক রাখতে গিয়ে যদি দু'য়েকটি আন্তর্জাতিক ম্যাচের সূচী পিছিয়েও দিতে হয় তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল বা আইসিসি তাই করে।

আইপিএলের জন্য ক্রিকেট সংস্থার অভিভাবকদের এরকম সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে আইপিএলের জনপ্রিয়তা কয়েকগুণ বাড়াতে সাহায্য করেছে। একটি কথা জানিয়ে দেওয়া ভালো যে, আইসিসির যতগুলো ইভেন্ট রয়েছে তার মধ্যে আইপিএলকে সেরা হিসেবে মেনে নেওয়াই যুক্তিসঙ্গত।

প্রচুর স্পনসরশিপ ও সম্প্রচার

একটি খেলাধুলার ইভেন্ট কখন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে উঠে? যখন সে খেলার পেছনে কোটি কোটি ডলার বাজেট থাকে এবং প্রচুর সম্প্রচারের ব্যবস্থা থাকে। হাজার হাজার কোটি টাকার বাজেট থেকে শুরু করে পৃথিবীজুড়ে আইপিএলের সম্প্রচার হয় ফলে মানুষ অবসর সময় কাটানোর জন্য ধুম ধারাক্কা চার ছক্কা দেখে।

আইপিএলের পেছনে এত এত বাজেট যা আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপের চাইতেও বেশি থাকে! আইপিএলের একটি দলের পেছনেই ব্যয় শত শত কোটি টাকা আর পুরো টুর্নামেন্টের জন্য সেটি কয়েক হাজার কোটি টাকা। এত বিশাল বাজেটের টুর্নামেন্ট তাই পুরো বিশ্বের বড় বড় কোম্পানি এতে জড়িয়ে যায়।

বড় বড় কোম্পানিদের স্পনসরশিপের কারণে প্রায় সকলের কাছে আইপিএলের বার্তা পৌছে যায় ফলে জনপ্রিয়তায় আইপিএল যে অপ্রতিদ্বন্দ্বী তা বের করতে খাতা কলমের প্রয়োজন হয় না।

ঝমকালো ব্যবস্থাপনা

প্রতিটি দলের জন্য আলাদা আলাদা হোমগ্রাউন্ড এবং সেই সাথে প্রতিটি দলের সাথে রাজ্যের সংমিশ্রণ থাকায় রাজ্যের প্রায় সকল মানুষই তার রাজ্যকে প্রতিনিধিত্ব করা দলকে ভালোবাসে। ফলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট টুর্নামেন্টে যেমন নিজ দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার ব্যাপার চলে আসে তেমনি আইপিএলের যেকোন টিমও মানুষের কাছে সত্তার মতো লেগে যায়।

খেলা চলাকালীন জাঁকজমকপূর্ণ চিয়ারলিডারদের নাচের তালে তালে গান বেজে উঠা কিংবা সাজসাজ রব উঠা স্টেডিয়ামে বিভিন্ন রঙের ছটায় স্টেডিয়াম প্রাণবন্ত থাকে। এসব ব্যবস্থাপনা আইপিএলকে জনপ্রিয়তার ক্ষেত্রে কয়েকধাপ এগিয়ে রাখে।

খেলা সম্প্রচারের ক্ষেত্রেও আইসিসি অপেক্ষা বিসিসিআই বেশি টাকা খরচ করে ফলে আইপিএলের সম্প্রচার বিশ্বমানের তো হয় ই; সেই সাথে পৃথিবীর আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ভারতীয়রা আইপিএল উপভোগ করে টিভির পর্দায়।

আইপিএল বড় নাকি বিশ্বকাপ বড়?

ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বললে- আইপিএল অপেক্ষা আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ই বড় হওয়ার কথা কেননা আর যাইহোক, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট টুর্নামেন্টের সাথে কখনোই ঘরোয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্টের তুলনা চলেনা৷ আইপিএল আর ক্রিকেট বিশ্বকাপ আসলে তুলনা করার মতো বিষয় নয়।

একটি ক্রিকেট বিশ্বকাপে একাধিক জাতি অংশগ্রহণ করে। কয়েকটি দেশের প্রতিনিধিত্ব করার কারণে টুর্নামেন্টটি জুড়ে সম্মান ওতপ্রোত জড়িয়ে যায়। সেই হিসেবে কখনোই আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপের সমতুল্য আইপিএল নয়।

কিন্তু জনপ্রিয়তা কিংবা ঝাঁকঝমকপূর্ণের কথা বললে অবশ্যই আইপিএল, আইসিসির যেকোন ইভেন্ট থেকে বড়। যে পরিমাণ মানুষ আইপিএলের জন্য মাতোয়ারা হয়ে উঠে আইসিসি ক্রিকেট টুর্নামেন্টে এরকমটা দেখা যায়না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ