আউটসোর্সিং এর কাজ করতে চাইলে যাবতীয় সকল তথ্য জেনে নিন

আউটসোর্সিং এর কাজ করতে চাইলে যাবতীয় সকল তথ্য জেনে নিন

www.dhakastaff.com

বর্তমান বিশ্বে আউটসোর্সিং কাজের চাহিদা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়েছে। লাখ লাখ বেকার লোকের কর্মসংস্থানের মাধ্যম হিসেবে ইতোমধ্যে বাংলাদেশের শিক্ষিত যুবকদের একটি বিরাট অংশ আউটসোর্সিং এর দিকে ঝুকে পড়েছে। কেউ বা আউটসোর্সিং কে কাজের ফাকে ফাকে বাড়তি উপার্জন হিসেবে নিচ্ছে আবার কেউ বা পেশা হিসেবেই আউটসোর্সিং কে গ্রহণ করছে।

আউটসোর্সিং কে আপনি কি হিসেবে নিতে চাইছেন, পেশা নাকি বাড়তি আয়? আপাতত ধরে নিচ্ছি, বাড়তি আয় হিসেবেই বেছে নিচ্ছেন। তো চলুন জেনে নেয়া যাক, আউটসোর্সিং এর কাজ শুরু করবেন যেভাবে এবং যাবতীয় সকল তথ্য।

আউটসোর্সিং কি?

আউটসোর্সিং হলো ইন্টারনেট সেবা কাজে লাগিয়ে বাসায় বসে অন্যের কাজ করে দেওয়া কিংবা নিজের প্রোডাক্টগুলো ঘরে বসেই বিক্রি করে দেওয়া। মূলতঃ আউটসোর্সিং কথাটির অর্থ ব্যাপক। তারপরও একটু ছোট্ট করে বুঝিয়ে বলছি। বর্তমানে আপনি ঘরে বসেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে একজন আমেরিকান ব্যাক্তির অফিসের কিছু কাজ করে দিতে পারেন। কাজের বিনিময়ে আমেরিকান ব্যাক্তিটি আপনাকে কিছু অর্থ পরিশোধ করবে যেটিকে আউটসোর্স ইনকাম বলে অর্থাৎ  আপনার মেইন ইনকাম সোর্সের বাইরে আরেকটি ইনকাম। আউটসোর্স ইনকামের পদ্ধতিটাকেই সাধারণত আউটসোর্সিং বলে। বর্তমানে এটি ছাড়াও নিজের তৈরী বিভিন্ন প্রোডাক্ট বা সেবা অনলাইনে বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করার পদ্ধতিও আউটসোর্সিং এর অন্তর্ভুক্ত। 


আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে আয়:

আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে কিভাবে আয় করবো এ নিয়ে অনেকেরই প্রশ্ন থাকে। অনেকেই আউটসোর্সিং করে ইনকাম করার জন্য সঠিক গাইডলাইন পান না ফলে আউটসোর্সিং নিয়ে অনেকের কৌতুহল থাকলেও, আউটসোর্সিং করে কিভাবে ইনকাম করতে হয় তা অজানাই থেকে যায়। এই অজানা থেকে বের হয়ে আউটসোর্সিং করে ইনকাম করতে চাইলে:
  • আপনাকে যেকোন এক বা একাধিক বিষয়ে কাজ জানতে হবে।
  • নির্দিষ্ট কিছু ওয়েবসাইটে কাজের আবেদন করতে হবে।
  • আবেদনে সাড়া পেলে যথাসময়ে কাজ সম্পন্ন করে দিতে হবে।
কাজ সম্পন্ন করলেই কেবল আপনি আপনার কাজের বিনিময়ে অর্থ পাবেন। আউটসোর্সিং করে আয় করার এই তিনটি ধাপ অবশ্যই আপনাকে মানতে হবে। পাশাপাশি এটাও মনে রাখতে হবে, শুধু কাজ জানলেই হবে না সেইসাথে আবেদন প্রক্রিয়াসহ আনুষঙ্গিক ব্যপারগুলোও খুটিনাটি জানতে হবে।

আউটসোর্সিং কিভাবে শিখবো:

আউটসোর্সিং কিভাবে শিখবেন এটি প্রায় সবার কমন প্রশ্ন। এর উত্তর হচ্ছে, আউটসোর্সিং শেখার তিনটি উপায় আছে। আপনি তিনটি উপায়ের যেকোন একটি উপায় অবলম্বন করে আউটসোর্সিং এর কাজ শিখতে পারেন। তিনটি উপায় হলো:

  • কোন প্রতিষ্ঠানে আউটসোর্সিং কোর্স সম্পন্ন করা
  • ব্যাক্তিগতভাবে কারও কাছে আউটসোর্সিং কাজ শেখা
  • ইউটিউব ভিডিও টিউটোরিয়াল দেখে শেখা

প্রতিষ্ঠান বা ব্যাক্তির কাছে আউটসোর্সিং কাজ শেখার পুর্বে অবশ্যই প্রতিষ্ঠান বা ব্যাক্তির সম্পর্কে জেনে নিবেন। অনেক ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান আছে যারা, কাজের চেয়ে চাপা বেশি ছুড়ে। এদের পরিহার করুন। 


আউটসোর্সিং কোর্স:

আউটসোর্সিং এর জন্য বিভিন্ন কোর্স আছে। আপনি চাইলে যেকোন কোর্স সম্পন্ন করে আউটসোর্সিং শুরু করে দিতে পারেন। কোর্সগুলো হলো:
  • এসইও (সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) 
  • ওয়েব ডিজাইন
  • অটোক্যাড
  • গ্রাফিক্স ডিজাইন 
  • ডিজিটাল মার্কেটিং
  • এনিমেশন ডিজাইন
  • ডাটা টাইপিং ইত্যাদি।
বাংলাদেশ থেকে মোটামুটি এসব আউটসোর্সিং এর কাজ ই করা হয়। তাছাড়া আপনি চাইলে ব্লগিং করেও অর্থ উপার্জন করতে পারেন যদি আপনার লেখালেখির অভিজ্ঞতা থাকে।

আউটসোর্সিং এর জন্য কোন কোর্সটি ভালো?

এক কথায় বলতে গেলে, সকল কোর্সই ভালো। আপনি যেকোন একটি কোর্স যদি ভালো করে আয়ত্ত্ব করতে পারেন এবং ডে বাই ডে যদি আপনার স্কিলটাকে ডেভেলপ করতে পারেন তবে প্রত্যেক কোর্স থেকেই ভালো কিছু করতে পারবেন। তবে তুলনামূলকভাবে গ্রাফিক্স ডিজাইনের চাহিদা অনেক বেশি থাকে এবং এই কোর্স থেকে ভালো পরিমাণ টাকাও আয় করা যায়। যাদের সৃজনশীলতা কম এবং অল্প সময়ে আউটসোর্সিং করতে চান তাদের ক্ষেত্রে ওয়েব ডিজাইন কিংবা এসইও অথবা ডিজিটাল মার্কেটিং টা উপযুক্ত কেননা গ্রাফিক্স ডিজাইনের ক্ষেত্রে যেমন সময়ের প্রয়োজন তেমনি সৃজনশীলতারও প্রয়োজন। 


আউটসোর্সিং নিয়োগ:

আউটসোর্সিং কাজ শেখার পর কোন প্রতিষ্ঠান চাকরির জন্য নিয়োগ দেয় কিনা তা প্রায় অনেকেই জানতে চান। তাদের জন্য একটি ভালো খবর যে, বর্তমান সময়ে অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের নানা ধরনের কাজ অনলাইনে করিয়ে নেওয়ার জন্য আউটসোর্সিং নিয়োগ দিয়ে থাকে। অর্থাৎ এসকল প্রতিষ্ঠান একটি নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে ফ্রীল্যান্সারদের কাজ দিয়ে থাকে। ফ্রীল্যান্সাররা সেসব প্রতিষ্ঠানের কাজ ঘরে বসেই করে দেয়। 

আউটসোর্সিং এর ওয়েবসাইট:

আউটসোর্সিং কাজ করার বেশ কিছু ওয়েবসাইট আছে। এসব ওয়েবসাইটে প্রতিদিন হাজার হাজার ফ্রীল্যান্সাররা কাজ করতে আসেন। আবার যারা প্রতিষ্ঠানের মালিক তারাও ফ্রীল্যান্সারদের খোজতে এসব ওয়েবসাইটে আসেন। বর্তমান বিশ্বে আউটসোর্সিং এর কাজের জন্য জনপ্রিয় ওয়েবসাইটগুলো হলো:

আরও বহুসংখ্যক ওয়েবসাইট আছে যেখানে আপনি আউটসোর্সিং এর কাজ করতে পারবেন তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, সকল ওয়েবসাইট পেমেন্টের গ্যারান্টি দেয় না। যেসকল ওয়েবসাইট অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য সেগুলোই উপরে দেওয়া আছে।

আউটসোর্সিং কাজের ক্ষেত্রে বর্তমানে পৃথিবীর ৮০ শতাংশ ফ্রীল্যান্সার আপওয়ার্ক এবং ফাইভার ব্যাবহার করে থাকে।

মোবাইলে আউটসোর্সিং:

একজন মোবাইল ফোন ব্যাবহারকারী তার ডিভাইস দিয়ে আউটসোর্সিং কাজ করতে পারবেন। তবে মোবাইল ফোন ব্যাবহারকারী গ্রাফিক্স ডিজাইন কিংবা ওয়েব ডিজাইনের মত কাজগুলো করতে পারবেন না। মোবাইল ডিভাইস দিয়ে ছোটখাটো আউটসোর্সিং এর কাজ যেমন  ডিজিটাল মার্কেটিং কিংবা এফিলিয়েট মার্কেটিং এর মত কাজগুলো করা যায়। তবে একজন সফল ফ্রীল্যান্সার হতে চাইলে আপনার অবশ্যই একটি কম্পিউটার থাকতে হবে। কিছু বিনিয়োগ (কম্পিউটার ক্রয়) যদি না থাকে তবে কিভাবে লাভের আশা করবেন বলেন? সুতরাং আউটসোর্সিং এর কাজ করতে চাইলে একটি কম্পিউটার কিনে ফেলুন অথবা বন্ধু বা আত্মীয়ের কম্পিউটার নিয়ে আপাতত শুরু করুন।


আউটসোর্সিং এ বাংলাদেশ:

আউটসোর্সিং এ বাংলাদেশের সম্ভাবনা প্রচুর। বিশ্বে আউটসোর্সিং এর শীর্ষে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান উপরের দিকে। প্রতি বছর হাজার হাজার বেকার তরুণ তরুণী আউটসোর্সিং করে তাদের বেকারত্ব দূর করছে। এতে যেমন একদিকে বাংলাদেশের বেকারত্ব দূর হচ্ছে তেমনি দেশের একটি বিশাল অংশ বাংলাদেশের রেমিট্যান্স বা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ভূমিকা রাখছে। আগে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে প্রবাসীদের ভূমিকা মুখ্য ছিল এখন সেটি অনেকটাই কমে এসেছে। অন্যান্য দেশে আউটসোর্সিং এর উপর ভ্যাট বা কর আরোপ করা হলেও বাংলাদেশে সেটি করা হয়নি ফলে একজন ফ্রীল্যান্সার(যিনি আউটসোর্সিং এর কাজ করেন) সহজেই বিনা ভ্যাটে আউটসোর্সিং করতে পারেন। তবে বাংলাদেশ থেকে প্রধান যে সমস্যাটি পরিলক্ষিত হয় সেটি হলো, বাংলাদেশে পেপাল সুবিধা না থাকায় একজন ফ্রীল্যান্সার পেমেন্ট পেতে গিয়ে ভোগান্তি পোহান। তবে আগের তুলনায় ব্যাংকিং পদ্ধতি উন্নত হওয়ায়, ব্যাংকের মাধ্যমেই এখন ফ্রীল্যান্সাররা পেমেন্ট পেয়ে থাকেন।