আগামী ১৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকায় পা রাখার কথা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। মোদীর এ সফর নিয়ে সরকারী মহল বেকায়দায় থাকলেও নরেন্দ্র মোদীকে ঢাকা সফর বাতিল করার জন্য সরকারের কিছু করার নেই কেননা কোন দেশের সরকার প্রধানকে আমন্ত্রণ জানিয়ে পরবর্তীতে না করে দেওয়ার নজির বিশ্বে তেমন নেই। শিষ্টাচার বহির্ভূত কিছু করতে গেলেই আন্তর্জাতিক মহলে বেকায়দায় পড়তে হবে হাসিনা সরকারকে। তাছাড়া পার্শ্ববর্তী দেশের সাথে সম্পর্ক অবনমন ঘটিয়ে ভবিষ্যতে ভালো কিছুর আশাও করছে না আওয়ামী লীগ সরকার৷ সব মিলিয়ে একদিকে দেশের জনগনের মোদী বয়কট অপরদিকে শিষ্টাচার রক্ষার্থে মোদীর সফর স্থগিত করতে না পারায় একরকম ফাঁদে পড়ে গেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মোদীর এবার তিস্তা চুক্তি করবেন?
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে মোদীর এ সফরেই তিস্তা চুক্তি হয়ে যাওয়ার কথা। যদিও অফিসিয়ালি এই চুক্তির কথা কেউ বলছে না তবে অনুমেয় যে, মোদী বাংলাদেশের জনগনের সহমর্মিতা আদায়ের জন্য তিনি মমতা ব্যানার্জিকে ছাড়াই তিস্তা চুক্তি সম্পন্ন করবেন। মোদী চাইবেন যেন, বাংলাদেশিরা এতে করে তাকে বাহবা দেয় এবং সাম্প্রতিক দিল্লিতে ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক হামলার কথা ভুলে যায় কিংবা সিএএ নিয়ে বাংলাদেশে যে বিতর্ক তা থেকে যেন বাংলাদেশিদের দৃষ্টি আড়াল হয়। তিস্তা চুক্তি সম্পন্ন হলে হাসিনা সরকারও ক্রেডিট নিতে চাইবে কিন্তু সম্ভবত বাংলাদেশিদের এই চুক্তিতে তেমন আসে যাবে না। বরং "আমার ভাইকে খুন করে তিস্তা চুক্তি? মানিনা, মানবো না" এরকম স্লোগান উঠার সম্ভাবনাও কম নয়।
কি বলছে ইসলামি দলগুলো
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, হেফাজতে ইসলামের মত ইসলামি দলগুলো নরেন্দ্র মোদীর আগমণ ঠেকাতে হুশিয়ারি দিয়েছেন। প্রয়োজনে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ঘেরাও থেকে শুরু করে ভারতীয় দূতাবাস ঘেরাও কর্মসূচিও হাতে নিয়েছে৷ যেকোন মূল্যে এসব দলগুলো একাট্টা হয়ে নরেন্দ্র মোদীর আগমন ঠেকাতে মাঠে নামবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগামী ১২ই মার্চ কর্মসূচি দিয়েছেন মাওলানা মামুনুল হক যিনি ইসলামী খেলাফতের একজন শীর্ষস্থানীয় ব্যাক্তি। ১৭ই মার্চ মোদীর সফর ঠেকাতে বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে কঠোর হুশিয়ারি দিচ্ছেন অনেক ওলামায়ে কেরাম।
ডাকসু ভিপি নুরুল ইসলাম যা বললেন
মোদীর সফর ঠেকাতে কঠোর হুশিয়ারি দিয়েছেন ডাকসুর নির্বাচিত ভিপি নুরুল ইসলাম নুরু। ডাকসুর ভিপি বলেন, "এই দেশ বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক দেশ। এ দেশে কোন সাম্প্রদায়িক ব্যাক্তি প্রবেশ করতে পারবে না, প্রয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হবে।" এসময় তিনি ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাস ঘেরাও কর্মসূচির কথাও উল্ল্যেখ্য করেন।
সরকারি ভাষ্য
বাংলাদেশের সরকারি দল আওয়ামী লীগ মোদীর সফরকে যথাযথ মর্যাদায় সম্পন্ন করার জন্য বদ্ধপরিকর। এ নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি জানিয়েছেন, কোন দলের হুমকিতে সরকার ভয় পাচ্ছে না বরং মোদির সফরকে নিরাপদ করতে যাবতীয় ব্যাবস্থা নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। ওবায়দুল কাদেরের মতে, মোদীর সফরকে সাম্প্রদায়িক রুপ দিতে বিরোধীদল উঠে পড়ে লেগেছে।
সাধারণ জনগণ যা ভাবছে
প্রায় যেকোন চায়ের দোকানে সাধারণ মানুষদের আলোচনায় মোদীর সফর নিয়ে আলোচনা চলছে৷ অধিকাংশ মানুষই মোদীর সফরকে ভালো চোখে দেখছে না বরং সাম্প্রদায়িক ব্যাক্তি হিসেবে বেশির ভাগ মানুষই মোদিকে বয়কট করার পক্ষে জোড়ালো অবস্থান নিয়েছেন। এমতাবস্থায়, ১৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষের চাইতেও মোদীর সফর টক অব দ্যা কান্ট্রিতে রুপান্তরিত হয়েছে। এখন বাকিটুকু দেখার পালা, কোথাকার জল কোথায় গড়িয়ে পড়ে।
0 মন্তব্যসমূহ