বিডিআর বিদ্রোহের রহস্য কি : শেখ হাসিনা কি জড়িত?

বিডিআর বিদ্রোহের রহস্য কি : শেখ হাসিনা কি জড়িত?

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উপর যেসকল ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে পিলখানা হত্যাকান্ড অন্যতম। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬শে ফেব্রুয়ারিতে ঘটা ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকান্ডে ৫৭জন সেনাবাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তা নিহত হন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন; তৎকালীন বিডিআর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ, কর্ণেল গুলজার উদ্দীন আহমেদ, কর্ণেল মো. মুজিবুল হকের মতো চৌকস সেনা অফিসাররা। 
www.dhakastaff.com
প্রিয়জনকে অশ্রুসিক্ত বিদায়

ন্যাক্কারজনক সেই হত্যাকাণ্ডের বিচার হলেও দেশের একদল মানুষ মনে করেন; পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পেছনে শেখ হাসিনা দায়ী। শেখ হাসিনা কি বিডিআর বিদ্রোহের সাথে জড়িত? অথবা পিলখানা হত্যাকাণ্ডের রহস্য বা উদ্দ্যেশ্য কি? এসব ব্যাপারে মানুষের জানার প্রবল ইচ্ছা থাকলেও যুগ পেরিয়েও এ বিষয়ে তেমন কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। যেকারণে বাংলাদেশিদের একটি বিরাট অংশ প্রায়শই বর্তমান সরকার প্রধান শেখ হাসিনাকে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা বলে দাবি করেন; যদিও তারা অনেকটা তথ্যসুত্র ব্যাতীত শুধুমাত্র অনুমান নির্ভর হয়েই এই দাবি করেন।

হাসিনাকে দায়ী করা হয় যে কারণে

আওয়ামী লীগ সরকারের ৪৮তম দিনে পিলখানা হত্যাকান্ডটি ঘটেছিল এবং ঘটনা যেদিন ঘটে ঠিক তার আগের দিন অর্থাৎ ২৪শে ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পিলখানায়া গিয়েছিলেন। পরের দিন অর্থাৎ ২৫শে ফেব্রুয়ারি (হত্যাকাণ্ডের দিন) শেখ হাসিনার পুনরায় সেখানে যাওয়ার কথা ছিল। যারা পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পেছনে শেখ হাসিনাকে দায়ী করেন তাদের মূল বক্তব্য হলো হাসিনাই পরিকল্পনা মাফিক এ হত্যাকান্ডটি চালিয়েছেন। তাদের যুক্তি হলো, সেনাবাহিনীর উর্ধ্বতন অফিসাররা বিএনপিপন্থী ছিলেন যেকারণে এদের ক্ষমতাচ্যুত করতে না পারলে সরকার পরিচালনা কঠিন হয়ে যাবে; এই ধারণা থেকেই কথিত কিছু বিপথগামী বিডিআর দিয়ে নিখুতভাবে হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

বিডিআর বিদ্রোহ কেন হয়েছিল

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পেছনে অনেক কারণ জড়িত থাকলেও মূল কারণটি ছিল সে সময়কার জোয়ানদের সাথে উর্ধ্বতন অফিসারদের তীব্র বিরোধ। জোয়ানদের একটি অংশ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করলেও দাবি দাওয়া পুরণে তেমন আশ্বাস পাননি; ফলে সময় যত গড়িয়েছিল তাদের মধ্যে ক্ষোভ ততই জমছিল। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের একটি অংশ জোয়ানদের সাথে যাচ্ছে-তাই ব্যবহার করতো ফলে দিনদিন জোয়ানদের সাথে উর্ধ্বতন অফিসারদের একটি দূরত্ব তৈরী হয়ে গিয়েছিল; যার ফলস্রুতিতেই ২৫শে ফেব্রুয়ারি হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছিল। ২৪শে ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জোয়ানদের দাবী দাওয়াগুলো নিয়ে আশ্বস্ত করলেও জোয়ানদের একটি অংশ সন্তুষ্ট হতে পারেনি ফলে ২৪শে ফেব্রুয়ারি থেকে পিলখানায় থমথম অবস্থা চলছিল। তবে এত বড় ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটবে তা অনুমেয় ছিলনা এমনকি বাংলাদেশ গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকেও অনুমান করা হয়নি যদিও বাংলাদেশের তৎকালীন গোয়ান্দা সংস্থার ব্যার্থতা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ পোষণ করেন।

www.dhakastaff.com
বিডিআর বিদ্রোহের ছবি


হাসিনার জড়িত থাকার সম্ভাবনা

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পেছনে শেখ হাসিনার জড়িত থাকার ব্যাপারটি দেশীয় কিংবা আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দ্বারা প্রমানিত নয়। একটি দেশের সরকার প্রধান সেনাবাহিনীর উপর হত্যাযজ্ঞ চালাবে সেটি হলে এতদিনে কোন না কোন গোয়েন্দা সংস্থা বিস্তারিত ফাস করতেন। মূলত; পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পেছনে হাসিনার জড়িত থাকার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ কেননা, সবেমাত্র ক্ষমতা বসে সেনাবাহিনীর উপর এত বড় আঘাত হানার সাহস পৃথিবীর কোন দেশের সরকার প্রধানের নেই। সাধারণত এরকম হত্যাযজ্ঞ হলে একটি দেশের ক্ষমতা সামরিক বাহিনীর হাতে চলে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকে। সরকার গঠনের ৪৮তম দিনে যখন সরকার তার প্রশাসনকেই বুঝে উঠতে পারেনি তখন কিভাবে এত বড় রিস্ক নেন তা বোধগম্য নয়। হাসিনার পরিবর্তে অন্য কেউ সরকার প্রধান হলে, দেশের ক্ষমতা সে সময় সামরিক বাহিনীর হাতেও যেতে পারতো। সুতরাং পিলখানা হত্যাকান্ডের পেছনে হাসিনা জড়িত নয় বরং হাসিনাকে উৎখাতের একটি ব্যার্থ উপধাপ ছিল যদিও পিলখানা হত্যাকান্ডটিকে রাজনৈতিক নামকরণ করা অযৌক্তিক।

যাদের হত্যাকরা হয়েছিল তারা কোন দলের অনুসারী ছিলেন

যদিও সেনাবাহিনীর ইতিহাসে জঘন্যতম এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে  রাজনৈতিক কোন দলের সম্পৃক্ততা ছিল না তবুও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাথে রাজনৈতিক যোগসাজশ করে কিছু মানুষ মনে করেন এটি কেবলই রাজনৈতিক হত্যাকান্ড। পিলখানা হত্যাকাণ্ডে নিহত সেনা অফিসারদের মধ্যে বিএনপি এবং আওয়ামীলীগ উভয় দলের অনুসারী ছিলেন তন্মধ্যে আওয়ামীলীগপন্থী সেনা অফিসারের সংখ্যাই ছিল বেশি। যারা পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সাথে রাজনৈতিক যোগসাজশ খোজে পান তাদের কাছে এই তথ্যটি হয়তোবা অপ্রত্যাশিতই।

www.dhakastaff.com
বিডিআর বিদ্রোহের ছবি  ২০০৯

বিডিআর বিদ্রোহের বিচার

বাংলাদেশের ইতিহাসে কলঙ্কিত এই সেনা হত্যাকান্ডের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে ক্ষোভ বাড়তে থাকে। পরবর্তীতে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালাত ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ১৫২ জন অভিযুক্ত জাওয়ানকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ এবং ১৬১ জাওয়ানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন; আরও ২৫ জন জাওয়ানকে বিদ্রোহে অংশগ্রহণ করার কারণে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড প্রদান করে। সেনা হত্যাকাণ্ডের মামলায় অভিযুক্ত ২৭৭ জাওয়ানের অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের খালাস দেন আদালত। একসাথে এত মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিরোধিতা করে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা প্রতিবাদ জানান। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশন অভিযোগ করেন যে; বিচার কার্য সম্পন্ন করার জন্য আইনজীবিদেরকে পর্যাপ্ত সময় দেয়া হয়নি এবং সেই সাথে তারা অভিযোগ করেন যে- সেনাবাহিনীর পাল্টা প্রতিশোধের আশংকাকে প্রশমিত করার জন্য বিচার কাজ পরিকল্পিতভাবে সাজানো হয়েছে এবং তা দ্রুত নিস্পত্তি করা হয়েছে। 

অপারেশন ডাল-ভাত

বিডিআর বিদ্রোহের পেছনে "অপারেশ ডাল-ভাত" কর্মসূচিকে অন্যতম কারণে হিসেবে দেখা হয়৷ সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সেনাবাহিনী নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য কম মূল্যে খাবার বিতরণ করার কর্মসূচী হাতে নেয় যেটি অপারেশন ডাল-ভাত নামে পরিচিত। উক্ত কর্মসূচি থেকে আয়কৃত অর্থের ভাগ চায় জাওয়ানরা। মূলতঃ এ নিয়ে বিরোধে লিপ্ত হয়ে পড়ে সাধারণ সৈনিক আর অফিসাররা। সৈনিকদের মধ্যে আয়কৃত অর্থের অসম বন্টন তথা সাধারণ জাওয়ানরা অর্থ না পাওয়ার কারণে ভেতরে ভেতরে জাওয়ানদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হতে শুরু করে। বিডিআর বিদ্রোহের পেছনে অপারেশন ডাল-ভাত অন্যতম কারণ হলেও একমাত্র কারণ নয় বরং অতীতের ক্ষোভ জেদকে অপারেশন ডাল-ভাত অনেকটাই ত্বরান্বিত করেছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

5 মন্তব্যসমূহ

  1. যা লিখা হয়েছে তা একদম সঠিক তা বলতে পাড়বেন না..! আমার মনে হয় এই ঘটনার গভীরে পৌচানো আরো অনেক বাকি রেখেই আপনি লিখেছেন। যদিও আমি তখন সবে মেট্রিক পাস করি।এসব নিয়ে সে সময় আমাদের বয়সের কেও তেমন ভাবতো না। এখন ভাবছি কিন্তু এই ঘটনার তলানিতে কি আছে সেটা এত্ত সোজা করে কেও ই লিখেন নাই।

    উত্তরমুছুন
  2. পিলখানা হত্যাকান্ড
    অনেক গভীরে যেতে হবে. কারণ আঃলীগ এর আতাত আছে. এই অবৈধ হাসিনা সরকারের কাছে তুছ্য ব্যাপার. এই শেখ হাসিনা বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য নিজের স্বামী কে মূল্যায়ন করেনি.

    উত্তরমুছুন