জাতির পিতা কে? এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা বলা যাবে কি না, এই নিয়ে বাংলাদেশে বিতর্ক চলছে বছরের পর বছর। কেউ বলেন, বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা বলাতে কোন ক্ষতি নেই আবার অনেকেই মনে করেন, জাতির পিতা বলতে কেবল হযরত ইবরাহিম (আঃ) কেই বুঝায় সুতরাং ইবরাহীম (আ) ব্যাতিত অন্য কাউকে জাতির পিতা বলা মুসলিমদের জন্য হারাম। বিশেষ করে, জাতির পিতা বিতর্কটি বাংলাদেশে আগস্ট এবং মার্চ মাস আসলেই মাথা চাড়া দিয়ে উঠে এমনকি বঙ্গবন্ধুর আলোচনা আসলেই "জাতির পিতা" শব্দটি বাংলাদেশে একরকম আলোচনার শীর্ষে চলে আসে।
জাতির পিতা হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিতর্কের মূল কারণ, ইসলামে মুসলিমদের জাতির পিতা হিসেবে হযরত ইব্রাহিম (আ) কে মানা হয়। সেকারণে বাংলাদেশে আলেম ওলামাদের একটি বিরাট অংশ এবং মুসলিম সমাজের অনেকেই বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা হিসেবে মানতে অস্বীকৃতি জানান।
মুসলিম প্রধান দেশ হলেও বিভিন্ন আরব দেশগুলোতেও জাতির পিতার প্রচলন রয়েছে। যেমন, ইসলামের পুণ্যভূমি হিসেবে খ্যাত সৌদি আরবে জাতির পিতা হিসেবে ইবনে সাউদকে মানা হয়। পাকিস্তানের জাতির পিতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এবং তুরস্কের জাতির পিতা কামাল আতাতুর্ক। এদের সম্পর্কে তাদের দেশে তেমন বিতর্ক না থাকলেও বাংলাদেশে কেন বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এত বিতর্ক হয়?
এর কয়েকটি ব্যাখ্যা থাকতে পারে তন্মধ্যে "জাতির পিতা"র ভূল ব্যাখ্যা এবং বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক বিরোধী মতাদর্শ প্রধান।
জাতির পিতার ভূল ব্যাখ্যা:
অনেকেই মনে করেন, বাংলাদেশে জাতির পিতার ভূল ব্যাখ্যা করা হয় যেকারণে এটি নিয়ে বিতর্কের তৈরী হয়। সাধারণত কয়েকটি দৃষ্টিকোণ থেকে জাতির পিতাকে আলাদা আলাদাভাবে ভাগ করা যায়। যেমন, ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে জাতির পিতা একেক ধর্মের একেকজন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ইসলাম ধর্মে জাতির পিতা ইব্রাহিম (আ), খ্রিস্টান ধর্মে জাতির পিতা যিশু খ্রীষ্ট, অনুরুপভাবে হিন্দু ধর্মের জাতির পিতা হিসেবে রাজা রামমোহন রায়কে মানা হয়।
আবার একটি গোত্র বা দেশ গঠনের পেছনে যে ব্যাক্তিটির অগ্রণী ভূমিকা থাকে তাকে সে দেশের বা সেই জাতির জন্মদাতা বা পিতা হিসেবে মানা হয়। যেমন পাকিস্তান সৃষ্টির পেছনে কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর অবদান থাকায় তাকে পাকিস্তানের জনক বলা হয়। তদ্রুপ কামাল আতাতুর্ককে তুরস্কের জাতির পিতা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বাংলাদেশের জাতির পিতা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
ইংরেজিতে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে জাতির পিতাকে Father of the Religion এবং দেশ গঠনের ক্ষেত্রে জাতির পিতাকে Founder of the Nation হিসেবে দেখানো হয়। ইংরেজী শব্দ দুটি থেকে এদের মধ্যে বিস্তর ফারাক অনুমেয় হলেও যেহেতু বাংলা শব্দ দুটি একই রকম হয়, সেহেতু বাংলাদেশের সাধারণ মানুষেরা এটিকে ভূলভাবে গ্রহণ করে।
বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক বিরোধী মতাদর্শ:
১৯৪৯ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ আওয়ামিলীগ (তৎকালীন আওয়ামী মুসলিম লীগ) প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে মোটামুটি আওয়ামিলীগের হাত ধরেই বাংলাদেশের জন্ম হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুর বিপরীত মতাদর্শের দল তৈরী হতে থাকে যদিও স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সেটি ছিল কিন্তু স্বাধীনতার পর তা কয়েকগুন বেড়ে যায়। বঙ্গবন্ধুর বিপরীত মতাদর্শের যারা আছেন স্বাভাবিকভাবেই তারা বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা হিসেবে মানতে চান না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিএনপি এবং তার অংগ সংগঠনের অধিকাংশ নেতাকর্মী বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা হিসেবে মানেন না এমনকি বঙ্গবন্ধুকে বাংলাদেশ স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবেও মানতে চান না। যদিও ঐতিহাসিক এবং দালিলিকভাবে প্রমাণিত যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক।
বিভিন্ন দেশের জাতির পিতা:
বাংলাদেশ: শেখ মুজিবুর রহমান
পাকিস্তান : মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ
ভারত : মহাত্মা গান্ধী
মালেশিয়া : আব্দুল রহমান
ইন্দোনেশিয়া : সুকার্নো এবং মোহাম্মদ হাত্তা
তুরস্ক : কামাল আতাতুর্ক
সৌদী আরব : আব্দুল আজিজ
আরব আমিরাত : জায়েদ বিন সুলতান
ফিলিস্তিন : জামাল আব্দেল নাসের
আরও পড়ুনঃ
0 মন্তব্যসমূহ