সিএএ বা নাগরিকপঞ্জি কি? মুসলমানরা যেভাবে নির্যাতিত হতে চলছে

সিএএ বা নাগরিকপঞ্জি কি? মুসলমানরা যেভাবে নির্যাতিত হতে চলছে

www.dhakastaff.com
সিএএ বা নাগরিকপঞ্জি হচ্ছে মোদী সরকারের পরিকল্পিত মুসলিম নিপীড়নের একটি ব্যবস্থা। এ ব্যবস্থাপনায় একদিকে যেমন সংখ্যালঘু মুসলমানরা দেশান্তরিত হতে বাধ্য হবে তেমনি অদূর ভবিষ্যতে ভারত রাষ্ট্রটির স্থিতিশীলতারও অবনতি ঘটবে। Citizenship Amendment Act বা সিএএ হলো মুসলমানবিরোধী সুক্ষ্ম একটি আইনি ব্যাবস্থা যেখানে ভারতে বসবাসরত কোন ব্যাক্তিকে সেদেশে থাকতে হলে নথিপত্র দেখিয়ে সেদেশের নাগরিকত্ত্ব নিতে হবে। সিএএ নিয়ে ভারতে পক্ষে বিপক্ষে কথাবার্তা চললেও সেদেশের সচেতন নাগরিকরা সিএএ এর কট্টরবিরোধী। চলুন জেনে নেয়া যাক, সিএএ এর সম্পর্কে মোদী সরকারের পরিকল্পনা।

Citizen Amendment Act (CAA) কি এবং কেন?

ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে ভারতে অবস্থানরত যেকোন ব্যাক্তিকে কিছু বৈধ কাগজপত্র দেখাতে হবে। কাগজপত্রের মধ্যে আছে: 
  • জন্মসনদ
  • বাবা মার ভোটার আইডি
  • অন্যকোন দেশ থেকে আসলে তার বৈধ কাগজপত্র

কাগজপত্র দেখানোর পর যাচাই বাছাইপূর্বক যদি সরকার মনে করে যে, আবেদনকারী সে দেশের নাগরিক তবে তাকে নাগরিকত্ব সনদ দেওয়া হবে নতুবা আবেদনকারীকে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে বন্দী শিবিরে আটকে রাখা হবে।

বৈধ কাগজপত্র দেখাতে না পারলেও হিন্দু, খ্রীস্টান, বৌদ্ধ, জৈন, শিখদের নাগরিকত্ত্ব দেওয়া হবে যদি তারা ২০১৪ সালের পূর্বে বাংলাদেশ, পাকিস্তান কিংবা আফগানিস্তান থেকে নির্যাতিত হয়ে ভারতে গিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র মুসলিমদের সেদেশের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না।

মুসলমানরা যেভাবে সিএএ এর মাধ্যমে নির্যাতিত হবে

ভারতের অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে। দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করা এসব মানুষগুলোর মধ্যে হিন্দু মুসলমান উভয় ধর্মের লোকই আছে৷ এসব দরিদ্র মানুষের কাছে কোন রকম কাগজপত্র নেই। ভারতের নাগরিকত্ব আইন কার্যকর করা শুরু হলে এসব দ্ররিদ্র মানুষের অধিকাংশই কোন বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারবে না ফলে এসব দ্ররিদ্র মানুষরাই সিএএ এর জালে আটকে যাবে৷ এরপর যারা হিন্দু বা অন্যধর্মালম্বি আছেন তারা পরবর্তী ধাপে অন্যদেশ থেকে নির্যাতিত বলে নাগরিকত্ত্বের আবেদন করলেও মুসলমানরা পুরোপুরি আটকে যাবে ফলে এসন দ্ররিদ্র মুসলিম পরিবারগুলো ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে। কেউ ভারতের নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত হওয়ার পর হাইকোর্টে গিয়ে পুনরায় আবেদন করার সুযোগ পেলেও যারা দ্ররিদ্র মুসলিম রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে হাইকোর্ট পর্যন্ত যাওয়ার সামর্থ্য নগন্য। আর এভাবেই সুক্ষ্ম আইন প্রয়োগ করে মুসলিমদের নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করা হবে।


CAA নিয়ে ভারতের বিভাজন চরমে

সিটিজেন এমান্ডমেন্ট এক্ট তথা সিএএ নিয়ে ভারতে তুমুল বিভাজনের সৃষ্টি হয়েছে। এক্ষেত্রে ছাত্রসমাজ থেকে শুরু করে ভারতের এলিট শ্রেনীর প্রায় সকলেই সিএএ বিরোধী। কেবলমাত্র ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপির সমর্থকরাই সিএএ এর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। যদিও বিজেপির অনেক নেতা বা কর্মীরাও সিএএ বিরোধী মনোভাব পোষণ করেন তবে তা সত্ত্বেও দলীয় সিদ্ধান্তের কারনে তারা তা প্রকাশ করতে পারছেন না৷ ভারতের নোবেলজয়ী অর্মত্য সেন থেকে শুরু করে প্রায় সকল এলিট শ্রেনীর ব্যাক্তিবর্গ মূলত সিএএ কে একরকম বয়কট ই করেছেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি তো রীতিমতো সিএএ এর বিরোদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছেন। এসব বিভাজনের কারণেই একচেটিয়া বিজেপিকে হারিয়ে আম আদমি পার্টি দ্বিতীয়বারের মতো দিল্লির সিংহাসনে বসছেন। 

দিল্লির সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পেছনে সিএএ দায়ী

সম্প্রতি দিল্লিতে ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় চল্লিশ জনের মত। এরমধ্যে হিন্দু মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের লোকজন ই ছিলেন তবে এ হামলার মূল টার্গেট মুসলমানরাই ছিল। এই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পেছনে সিএএ ই দায়ী এবং পরোক্ষভাবে এটি বিজেপির দুই নেতা নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহের ঘাড়েই বর্তায়। দিল্লির সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এখানেই শেষ নয় বলেই মনে হয় কারণ, এর পেছনে ভারতের উগ্রনীতি কাজ করছে। সাম্প্রদায়িকতার এই বিষবৃক্ষ সিএএ আইন পাশ করার পর অনেক দূর পৌছে গেছে। এই আইন হওয়ার পর মুসলমানদের মধ্যে নিজেদের নাগরিকত্ত্ব নিয়ে যেমন সন্দেহ তৈরী হয়েছে তেমনি হিন্দু কট্টরপন্থীরাও ভেবে বসেছেন যে, ভারতে মুসলিমদের জায়গা নেই। আর এসব মনোভাবই ২০কোটি মুসলমানদের সাথে হিন্দু কট্টরপন্থীদের লাগিয়ে দিবে।

সিএএ বিরোধী উল্লেখযোগ্য আন্দোলন

www.dhakastaff.com
জামিয়া মিলিয়ার ছাত্রদের আন্দোলন দিয়ে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে সিএএ বিরোধী আন্দোলন। এরপর একে একে ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে এর মধ্যে, আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়, আইআইটি, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এরপর দিল্লির শাহীনবাগে মুসলিম নারীদের একটানা আন্দোলন চলতে থাকে। বৃষ্টি, শীত উপেক্ষা করে চলে সেই আন্দোলন, পরবর্তীতে শান্তিপূর্ণ শাহীনবাগের আন্দোলনেই হিন্দু কট্টরপন্থীরা আক্রমণ চালায় যা দিল্লির দাঙ্গা নামে সবাই জেনে গেছে। সিএএ বিরোধী আন্দোলনের মধ্যে জা'মা মসজিদের সামনে মুসল্লিদের আন্দোলন এবং মমতা ব্যানার্জির রোড মার্চও উল্লেখযোগ্য।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ