সরকার যেখানে ১লক্ষ প্রবাসীদের কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করতে পারেনি সেখানে ১৬ কোটি মানুষের সেবা দিতেও ব্যর্থ হবে। সুতরাং যা করার আমাদেরই করতে হবে। হাতে পর্যাপ্ত সময় নেই বলা চলে।
কয়েকদিন ধরে লক্ষ করছি, যারা একটু আধটু করোনার লক্ষণ নিয়ে পরীক্ষা করাতে চাচ্ছেন তারা এই হাসপাতাল, ঐ হাসপাতাল ঘুরে ঘুরে ব্যর্থ হয়ে সর্বশেষ পরীক্ষা না করেই ঘরে ফিরছেন৷ কেন পরীক্ষা করাতে পারছেন না? কারন আমাদের হাতে পর্যাপ্ত পরীক্ষার কিট নেই!
বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি:
বিশ্বব্যাপী করোনার বিস্তার থেকে এটি জানা যায় যে, করোনা ভাইরাসটি একটি নির্দিষ্ট সাইকেল অনুসরণ করছে। এটি প্রথমে কিছুদিন সুপ্ত অবস্থায় থেকে তারপর লক্ষণ প্রকাশ করছে। মূলতঃ এসব উপসর্গের উপর ভিত্তি করে করোনার বিস্তারকে আমরা মোটামুটি তিন ভাগে ভাগ করতে পারি।
- প্রাইমারি স্টেট
- সেকেন্ডারি স্টেট
- টারশিয়ারি স্টেট
এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনা যে পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছে সেটিকে মোটামুটি প্রাইমারি স্টেট বলা চলে। এই স্টেটে করোনা ভাইরাস সুপ্ত অবস্থায় বিরাজ করে। প্রাইমারি স্টেটে আক্রান্তের সঠিক সংখ্যা নির্ণয় করা খুব কঠিন কেননা এ পর্যায়ে আক্রান্ত ব্যাক্তি নিজেও জানেন না যে, তিনি করোনা ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট রোগ কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত। সুতরাং আক্রান্তের প্রকৃত হিসাব সুপ্ত।
সরকারি প্রতিষ্ঠান আইসিইডিআর এর তথ্যমতে বাংলাদেশে সর্বমোট ১৪জন আক্রান্তের তথ্য পাওয়া গেছে যা প্রকৃত সংখ্যার চেয়ে অত্যাধিক পরিমানে কম হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি কেননা তারা কেবল হাজার কয়েক মানুষের করোনা টেস্ট করাতে পেরেছেন যেখানে লক্ষাধিক মানুষ ঝুকির মধ্যে আছেন। ইদানিং অনেক মানুষই তাদের হেল্প লাইনে ফোন দিয়েও কার্যত কোন সাড়া পাচ্ছেন না সুতরাং সরকারি তথ্যে প্রকৃত সংখ্যা কখনোই সম্ভব নয়।
করোনা ভাইরাসের সেকেন্ডারি পর্যায়টি বাংলাদেশে মহাবিস্ফোরণের মতো হতে যাচ্ছে কারণ এ পর্যায়ে একসাথে সহস্র মানুষের অসুস্থ হয়ে পড়ার ঝুকি রয়েছে। প্রাইমারি স্টেটে করোনা ভাইরাস যে শিকড় গেড়ে বসে আছে তার উপসর্গ প্রকাশ পাবে এই স্টেটে। ভাইরাসটি গোপনে যতদূর ছড়িয়েছে তা পরিলক্ষিত হওয়ার পর মানুষ ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ার ঝুকিও অনেক। টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া পর্যন্ত করোনার থাবা পরিলক্ষিত হতে পারে। মহামারী শুরু হওয়ার পর কয়েক লক্ষ মানুষের মৃত্যু ঘটতে পারে এবং এটি হতে পারে বাঙালির উপর ভয়ংকরতম মহামারি।
অবশেষে টারশিয়ারি স্টেটে করোনার প্রাদুর্ভাব কিছুটা কমতে শুরু করবে। অবশ্য প্রাদুর্ভাব কমার জন্য কমপক্ষে ৬মাস অপেক্ষা করতে হবে।
ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তুলুন
আপনার পরিবার রক্ষায় আপনাকেই এগিয়ে আসতে হবে৷ যার যার অবস্থান থেকে করোনার বিরুদ্ধে লড়তে হবে। পরিবারের বয়স্ক এবং শিশুরাই করোনার ঝুকিতে সুতরাং এদের রক্ষায় আমাদেরকেই কিছু একটা করতে হবে। এই কিছু একটা হলো, সচেতনতা। প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাওয়া একদম মানা। সাবান দিয়ে বারবার হাত দোয়া। নিয়মিত গোসল করা থেকে শুরু করে পাবলিক প্লেস এড়িয়ে যাওয়া। সবকিছুতেই আমাদের সচেতন হতে হবে৷ আমাদের দেশের সেই সক্ষমতা নেই যে, ১৬কোটি মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দিবে সুতরাং সরকারের জন্য বসে না থেকে আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার্থে আমাদেরই এই কিছু একটা করতে হবে। দিনশেষে যাদের কেউ নেই, তাদের জন্যও আমাদের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। আমরা করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করে জিতবো ইনশাল্লাহ।
করোনায় সরকারের ব্যর্থতা
প্রথম দিকে সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিলে করোনা ভাইরাস রোধ অনেকটাই সম্ভব ছিল। দূর্ভাগ্যবশত বাংলাদেশ সরকার মুজিব বর্ষের জন্য করোনাভাইরাস নিয়ে মোটামুটি গাফিলতি করেছে। সারাদেশে এমন কোন জায়গা নেই যেখানে মুজিব বর্ষের ব্যানার ফেস্টুন নেই অথচ এরকম একটি মহামারী সত্ত্বেও দেশের কোথাও তেমন সচেতনতামূলক সরকারি ব্যানার ফেস্টুন দেখা যাচ্ছে না। বিদেশ থেকে যারা বাংলাদেশে আসছেন তাদের ঠিকমতো কোয়ারেন্টাইন করা হচ্ছে না৷ সরকার প্রথমদিন থেকেই কঠোর নজরদারি করলে আজকে বাংলাদেশে এরকম পরিস্থিতি হতো না৷ এখন পর্যন্ত সরকার নীরব ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে যা বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের লজ্জা দেয়।
আরও পড়ুন>>>
শেখ মুজিবুর রহমানকে "জাতির পিতা" বলা যাবে কি না?
আরও পড়ুন>>>
শেখ মুজিবুর রহমানকে "জাতির পিতা" বলা যাবে কি না?
0 মন্তব্যসমূহ