খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ার পর বিএনপির আন্দোলন এবং প্যারোলে মুক্তি

খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ার পর বিএনপির আন্দোলন এবং প্যারোলে মুক্তি

www.dhakastaff.com

২০১৮ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া যেদিন আদালত প্রাঙ্গনে যাচ্ছিলেন, আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছিল বিএনপি আজ জাগ্রত হতে চলেছে। কথিত গুম হওয়া নেতা হাবিবুন নবী সোহেল সহ বিএনপির অনেক কর্মীরাই রাস্তায় নেমেছিলেন কিন্তু জনতার যে ঢল আশা করেছিলাম সে ঢল সেদিন ঢাকায় নামেনি। ঢল না নামার খেসারত হিসেবে দীর্ঘ দুই বছর ধরে বেগম খালেদা জিয়া কারাভোগ করছেন৷

মনে পরে, ২০০৪ সালে যেদিন আওয়ামীলীগ নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারকে হত্যা করা হয় সেদিন সরকারকে তোয়াক্কা না করে পুরো টঙ্গীতে ঢল নামিয়ে দিয়েছিলেন আওয়ামিলীগের অনুসারীরা। সেদিন পুলিশ বাহিনী আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের উপর লাঠি চালালেও পিছু হটেন নি নেতাকর্মীরা বরং পুলিশের লাঠি চার্জে পিঠ পেতে দিয়েছিলেন, গুলি চালানোর জন্য বুকও পেতে দিয়েছিলেন।
পুরোপুরি না হলেও আমরা আশা করেছিলাম, এমন কিছুই ৮ই ফেব্রুয়ারি ঘটতে যাচ্ছে কিন্তু সেদিন এমন কিছুই হয়নি বরং সেদিন সামান্য কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়াই অন্যসব স্বাভাবিক দিনের মত সেই দিনটিও পার করেছে রাজধানীবাসি।

কেন আন্দোলন করতে পারছে না বিএনপি?

বিএনপি আন্দোলন করতে না পারার মুল কারণটাই হচ্ছে তাদের দলে সমন্বয়তার অভাব। বর্তমানে দলটি যে নেতার উপর নির্ভরশীল তিনি প্রায় এক যুগ ধরে লন্ডন প্রবাসী। দেশ থেকে দীর্ঘ সময় দূরে থাকার কারনে তারেক রহমান দেশ সম্পর্কে সঠিক তথ্য হয়তো উপলব্ধি করতে পারছেন না৷ ফলে উনার সিদ্ধান্তে কিছু ত্রুটি থেকে যাচ্ছে আবার বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতা মনে করেন, তারেক রহমানের কারনেই তাদের সর্বশেষ শাসনামলে বিএনপির ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফলে তারা তারেক রহমানের সিদ্ধান্তের প্রতি আস্থা ঠিকমতো রাখতে পারছেন না। এই আস্থা অনাস্থার দোলাচলে আর সমন্বয়হীনতার কারনে বিএনপি আন্দোলনে তেমন সুবিধা করতে পারছে না৷
একটা ব্যাপার পরিলক্ষিত যে, আওয়ামীলীগের নেতা এবং সরকার প্রধান শেখ হাসিনা যা বলেন, আওয়ামিলীগের তৃণমূল থেকে শুরু করে সকল নেতাকর্মী এমনকি চায়ের দোকানের একজন কর্মীও ঐ একই সুরে কথা বলেন অথচ বিএনপির নেতাদের মন্তব্যই একজন থেকে আরেকজনের ভিন্ন। এই সমন্বয়হীনতার কারনেই বিএনপি আন্দোলন করতে পারছে না অথচ বিএনপির ঠিক এই যায়গাতে আওয়ামিলীগ হলে- ভিন্ন কিছু হতেও পারতো।
বিএনপির আন্দোলন করতে না পারার পেছনে প্রশাসনকে দায়ী করা হলেও আমার মনে হয়না এটা কোন শক্ত কারণ কেননা পৃথিবীর সকল দেশের প্রশাসনই সরকারের পক্ষেই কাজ করে।

খালেদার প্যারোলে মুক্তি নিয়ে বিএনপি কি ভাবছে?

খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তি নিয়ে বিএনপি যাই ভাবুক না কেন প্যারোলে মুক্তি মানে রাজনীতি থেকে খালেদা জিয়া মাইনাস হয়ে যাওয়া। প্যারোলে মুক্তি বলতে সাধারণত শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দেওয়া যা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বুঝায়। খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তি দেওয়ার শর্তটি অবশ্যই চিকিৎসা হতে পারে ফলে চিকিৎসার বাইরে খালেদা জিয়া আর কিছুই করতে পারবেন না৷ সবসময় পুলিশ পাহাড়ায় থেকে চলতে হবে যতদিন না তিনি পুনরায় কারাভোগ শুরু করেন। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী প্যারোলে মুক্তি নিয়ে অবশ্যই বিদেশ চলে যাবেন চিকিৎসার জন্য। যতদিন বিদেশ থাকবেন ততদিন তিনি অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে প্যারোলে অব্যাহত রাখতে পারবেন কিন্তু দেশে ফিরলেই উনাকে জেলখানায় ঢুকতে হবে যা সত্তোর্ধ্ব একজন মহিলার ক্ষেত্রে কখনোই সম্ভব হবে না কিংবা তার পরিবার চাইবে না।
সুতরাং প্যারোলে নেওয়া মানে খালেদার রাজনীতি সমাপ্তির ইঙ্গিত। খালেদা জিয়ার প্যারোলে নিয়ে বিএনপির মধ্যেই মতবিরোধ রয়েছে বলে মনে হয়। কারণ হিসেবে বলা যায়, বিএনপি থেকে খালেদা জিয়া মাইনাস হলে অনেক নেতার ভাগ্য খুলতে পারে যেকারণে অনেকেই এর সুবিধে ভোগ করতে চাইবেন আবার অনেকেই খালেদা জিয়ার প্রভাবকে খাটিয়ে বিএনপিকে টিকিয়ে রাখতে চান। সেকারণে, বিভিন্ন অসুস্থতা সত্ত্বেও খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তি অনেকেই চান না।
সর্বোপরি, বিএনপির সিদ্ধান্ত দোলায়মান।

খালেদা জিয়া জামিন প্রাপ্য কি না

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া জামিন প্রাপ্য কি না সেটি আদালত জানেন। যেহেতু আদালত বেগম খালেদা জিয়াকে শাস্তি দিয়েছেন সেহেতু আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে বলা যায়, তিনি যতই সাবেক প্রধানমন্ত্রী হোন না কেন তিনি অপরাধ করেছেন এবং তিনি অপরাধের শাস্তি পেতে বাধ্য। জামিন পাবেন কি পাবেন না সেটি কেবল আদালতের এখতিয়ার কিন্তু একই রকম মামলায়
ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা এবং প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদও দন্ডিত হয়েছিলেন অথচ তাদের কেউ ই জেলখানায় বন্দী ছিলেন না। একই রকম মামলা সত্ত্বেও দুজন নাগরিকের ভিন্ন ভিন্ন সাজা হতে পারেনা। এটা কেবল তখনই সম্ভব যখন এরমধ্যে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থাকে।

খালেদা জিয়ার মুক্তি দিতে সরকারের সদিচ্ছা কতটুকু?

বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রধান বিরোধী দলের চেয়ারপার্সন সুতরাং খালেদা জিয়াকে জেলখানায় বন্দী রেখে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে নিষ্ক্রীয় রাখতে পারলে সর্বোচ্চ সুবিধা হয় সরকারি দলেরই অতএব সরকারের সদিচ্ছা কতটুকু এই প্রশ্নটা অনেকটাই বেমানান। সরকারি দলের বিভিন্ন নেতা বরাবরই বলে আসছেন, খালেদা জিয়ার মামলাটি আদালতের বিষয়, আদালত চাইলে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে পারে। প্যারোলে নিয়েও অনেক সময় অনেক কথা শুনা যায় তবে, প্যারোলে নিয়ে সরকারের কিছুটা সদিচ্ছা অবশ্যই আছে কেননা এটি ই কেবল খালেদাকে মাইনাস করার সুন্দর পন্থা।

খালেদা জিয়ার আটকে থাকা রাজনৈতিক সংকট কি না

বিরোধীদলের নেত্রীকে জেলখানায় আটকে রাখা অবশ্যই রাজনৈতিক সংকটের উৎকৃষ্ট উদাহরণ তবে এখানে অনেকটা আইনের শাসনের ব্যাপার পরিলক্ষিত। কেউ আইনের উর্ধ্বে নয় এটি যেমন সত্য তেমনি আইন সবার জন্য সমান এটিও সত্য। সমপরিমাণ অপরাধ করে কেউ জামিনে থাকবে আবার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে কেউ জেলখানায় থাকবে তা তো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ