শিকড় ছেড়া বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এখন যেমন

শিকড় ছেড়া বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এখন যেমন


একসময় বাংলাদেশ আর ছাত্রলীগ প্রায় সমার্থক শব্দ ছিল। ছাত্রলীগের তুমুল আর তুখোড় আন্দোলন এক সময় পাকিস্তানিদের বুকে যেমন কাপন ধরিয়ে দিত তেমনি মানুষের ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য ছাত্রলীগ সব সময় সচেষ্ট থাকতো। সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ভরসাস্থল হিসেবে বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝিতে ছাত্রলীগ ই ছিল কেবল এক ও একমাত্র। যদিও ছাত্র ইউনিয়ন নামক আরেকটি সংগঠন ছিল কিন্তু ছাত্রলীগের কাছে এটি ধাচে টিকতো না।

দিন বদলের যুগ পেরিয়ে আসা বর্তমান ছাত্রলীগ জনগনের আশা প্রতাশার কতটা প্রতিফলন ঘটাতে পারছে? কিংবা সাধারন ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বর্তমানে ছাত্রলীগের অবস্থান কতটুকু সেটি নিয়ে ঢাকা স্টাফের আজকের রিপোর্ট। 

বর্তমানের ছাত্রলীগ কতটা মানুষের ন্যায্য দাবী আদায়ের কথা বলে? এর উত্তর ছাত্রলীগের কোন কর্মী হয়তো সঠিক নিখুত উত্তরটি দিতে পারবেন। তিনি অন্তত এটুকু স্বীকার করবেন, গত দশকে মানুষের ন্যায্য দাবী আদায়ে ছাত্রলীগের কোন ভুমিকা নেই। বরং মানুষ যখনই ন্যায্য দাবী আদায়ের জন্য মাঠে নেমেছে ঠিক তখনই ছাত্রলীগ লাঠি সোটা নিয়ে ধাওয়া করেছে। পুলিশের সাথে সংঘবদ্ধ হয়ে মানুষের ন্যায্য আন্দোলনকে ভন্ডুল করে দিয়েছে।
ফলস্রুতিতে এক কালের বাংলাদেশের গর্বের ছাত্রলীগ মানুষের হৃদয় থেকে বিতাড়িত হয়েছে।

গত এক বছরেরও কম সময়ে বাংলাদেশে অনেকগুলো ছাত্র আন্দোলন ঘটেছে, ছাত্র আন্দোলনগুলো ছিল যৌক্তিক এবং ন্যায্য দাবি আদায়ের কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত কোন ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রলীগের সম্পৃক্ততা ছিল না তারা বরং সরকারের সাথে থেকে ছাত্র আন্দোলনকে রুখে দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল। শেষ পর্যন্ত ছাত্র আন্দোলনগুলো সফলতার মুখ দেখেছে। অপরদিকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ অন্ধকারেই থেকে গিয়েছে।

বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝিতে যে ছাত্রলীগ ছিল সেই সময়ের কর্মী থেকে নেতারা ত্যাগী ছিল। ত্যাগী নেতাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে কর্মীরা উজ্জীবিত হত কিন্তু বর্তমান সময়ের নেতারা চাটুকারিতায় ভরপুর। বর্তমানে ত্যাগি নেতাদের পদ পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীন ফলে যারা ত্যাগ তিতিক্ষা করে উঠে আসতে চান তারা হতাশ হয়ে ফিরে যান। চাটুকার নেতারা পদবী নিয়ে প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সর্বস্তরে চাদাবাজি, টেন্ডারবাজি শুরু করেন। ফলস্রুতিতে বর্তমান ছাত্রলীগের উপর ছাত্রছাত্রীরা কোন ভরসা করতে পারেন না। যার ফলাফলস্বরূপ গত ডাকসু নির্বাচনে দেখা গেল ছাত্রলীগ পরাজিত হল।

বর্তমানের ছাত্রলীগ পেশিশক্তি প্রদর্শনে অনেকটাই জোড় দিয়েছে বলে ধরা যায়। কিছু হলেই অস্ত্র উচিয়ে ধরার যে বদভ্যাস, এই বদভ্যাসের কারনেই ছাত্রলীগ আজ পর্যদুস্ত হয়ে পড়েছে। এছাড়া নেতৃত্ত্ব নির্বাচনে ভুল করায় অনেক সময় বিভিন্ন আপত্তিকর কর্মকান্ডে ছাত্রলীগের নাম জড়িয়ে যাওয়ায় বর্তমান সরকারের গলার কাটাও হতে হয় এই ছাত্রলীগকে।

এর থেকে উত্তরনের একমাত্র উপায়, ছাত্রলীগকে ঢেলে সাজানো এবং সর্বোপরি ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন সাধিত করা।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ