মুশফিক বনাম পাকিস্তান সফর : বাংলাদেশী ভক্তদের ভক্তামী

মুশফিক বনাম পাকিস্তান সফর : বাংলাদেশী ভক্তদের ভক্তামী

Mushfiqur Rahim

মুশফিকুর রহিম আর বাংলাদেশের জার্সি গায়ে না জড়াক এমনটাই জানিয়ে দিলেন বাংলাদেশি সাবেক এক মুশফিক ভক্ত যিনি কিছুদিন আগেও নাকি মুশির জন্য জীবন দিতেও রাজী ছিলেন! জনৈক এই ব্যাক্তির যুক্তি হলো, জীবনের চেয়ে দেশ বড় তবে কেন দেশের জন্য পাকিস্তানে খেলতে তিনি গেলেন না? ব্লা ব্লু আরও কিচ্ছা কত কাহিনী!

থাক সে কিচ্ছা কাহিনী। খেলা বড় নাকি জীবন বড় এসব প্রশ্ন আর না তুলি। এটাও না তুলি যে, আমাদের মুশি বড় নাকি পাকিস্তান সফর বড়। এসব প্রশ্নের উত্তর আপেক্ষিক, প্রসঙ্গ কাঠামোভেদে উত্তরটাও আলাদা তাই পরম উত্তর আশা করি না। 

মূল কথায় আসা যাক,
বাংলাদেশের ক্রিকেট খেলোয়াররা সরকারি টাকায় বেতন ভাতা নেন না ফলে একজন ক্রিকেটারের উপর অধিকার ফলানোর নৈতিক অধিকার জনগনের নেই কিন্তু যেহেতু জনগনের একটি অংশের (ফ্যান/ভক্ত নামে খ্যাত) কারনেই তাদের এত যশ খ্যাতি তাই ফ্যানদের কথা শুনতে ক্রিকেটাররা অনেকটাই বাধ্য! কিন্তু তাই বলে একজন ক্রিকেটারের নিজস্ব মতামত থাকতে পারবে না এটা তো হয় না!

মুশফিকুর রহিম গত এক যুগ ধরে ক্রিকেটে নিয়মিত ছিলেন। ফেসবুক স্ট্যাটাসেও তিনি জানিয়েছেন, শেষ কবে টিভিতে বাংলাদেশের খেলা দেখেছেন সেটি তার মনে নেই। পাকিস্তান সফরটি নিরপেক্ষ ভেন্যুতে হলে হয়তো এ সফরটিও টিভিতে দেখতে হতো না তার কিন্তু তিনি তার পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়েই এই সফর থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন৷
আমি হলেও ঠিক তাই করতাম কেননা মুশফিকের এ সিদ্ধান্ত থেকে এটাও শিক্ষণীয় ব্যাপার যে, খেলার চাইতে পরিবার টা কখনোই ছোট নয়। পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া প্রত্যেকেরই কর্তব্য।

আজকে যেসকল ভক্ত পাকিস্তান সফরে মুশফিকের না যাওয়াকে বিশ্বাসঘাতকতা কিংবা মুশির ভারতপ্রীতি হিসেবে দেখছেন তারা কিন্তু ঠিকই মরগানের বাংলাদেশে না আসাকে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখেন নি কিংবা কোন বৃটিশ মরগ্যানকে গালাগালিও করেনি কিন্তু হাস্যকর ব্যাপার, কতিপয় বাঙালি ক্রিকেট বুদ্ধিবাজ ও কথিত মুশি ভক্তরা মুশফিককে ঠিকই গালাগালি করেছেন। শুধুই কি গালাগালি? বরং জার্সিটা মুশফিকের গায়ে উঠলেই নাকি টেনে খোলে দিবেন এমন হুমকিও পাওয়া গেছে প্রচুর সাথে মুশির কয়েক গোষ্ঠি উদ্ধার তো করেই ফেলেছেন এসব ক্রিকেটবোদ্ধা আর নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।

এসব ভক্তের চোখে সম্ভবত বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তান ই বেশি নিরাপদবোধ হয়। যে বোধগম্যতা থেকে মরগান না আসলে মন্তব্য হয়: ঠিকই আছে আর মুশি না গেলে হয়- বিশ্বাসঘাতক কিংবা ভারতীয়!

খাটি একটা কথা বলি- 
মুশি না খেলার জন্য এসব ভক্তরা যে নারাজ কিংবা বেরাজ ব্যাপারটা আসলে তা নয় বরং মুশি কেন পাকিস্তানে গেল না এজন্যই এসব ভক্তরা নারাজ বেরাজ প্লাস মুশির উপর ক্ষীপ্ত।

সব মিলায়ে যাই হোক, মুশির পাকিস্তান "না-সফর" যারা মানতে পারেন নি তাদের জন্য একটা কথা বলি। দেখুন ভক্তকুল- সবারই নিজস্ব একটা সিদ্ধান্ত আছে। আমাদের উচিত মুশফিকের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানো সেই সাথে মুশফিকের "না-সফরের" প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া৷ আপনারা অনেকেই হয়তো ধর্মীয় দিক বিবেচনা করে হলেও মুশিকে পাকিস্তান যেতে বলেছেন কিন্তু ইসলাম ধর্ম এসব খেলার চেয়ে পরিবারের কথা শুনতে বেশি তাগিদ দিয়েছে বিশেষ করে, বাবা মায়ের কথা শুনা তো ছেলেমেয়েদের জন্য ফরজ! তবে হে ভক্তগণ- তোমরা এখন কি বলবা? 

তোমাদের কথা থাক৷ ইংল্যান্ড দলের অধিনায়ক বাংলাদেশে না আসলেও মরগানকে নিয়ে সেদেশের মানুষ কখনোই নেতিবাচক মন্তব্য করেনি এমনকি ক্রিকেট দিনশেষে একটি খেলা আর এই খেলার জন্য কাউকে তুলোধনা করা বৃটিশরা পছন্দ করেন না আর এজন্যই বৃটিশরা উন্নত জাতি৷ অস্ট্রেলিয়ার পুরো টিম বাংলাদেশে খেলতে না আসলেও অস্ট্রেলিয়ান ভক্তরা তাদের দলকে তিরস্কার করেনি কারণ তাদের কাছে নিরাপত্তার চেয়ে কখনোই খেলাটা বড় নয় আর তাই সেদেশের মানুষরা সবাই নিরাপদ।

আজ আমরা মুশফিককে পাকিস্তান না যাওয়ার জন্য তিরস্কার করছি আর জাতি হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করছি, কতটা পার্থক্য বৃটিশ আর বাঙালিদের!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ