স্বাধীনতার পর গত কয়েক দশকে বাংলাদেশে, ভারত বিরোধিতা ধীরে ধীরে বেড়ে চলেছে। বাড়তে বাড়তে বর্তমানে এমন অবস্থা যে, যেকোন সময়ের চেয়ে এখন ভারত বিরোধিতা বাংলাদেশে তুঙ্গে।
যদিও বাংলাদেশ সরকারের সাথে ভারত সরকারের সম্পর্ক সর্বোচ্চতায় রয়েছে কিন্তু বিপরীত চিত্র লক্ষ করা যায়, বাংলাদেশ এবং ভারতের জনগনের মধ্যে। অধিকাংশ বাংলাদেশি এখন আর ভারতকে বন্ধুপ্রতিম ভাবেন না। গত কয়েক দশকে কি এমন ঘটলো যে কারনে বাংলাদেশে এত ভারত বিরোধিতা?
এর কারণ হিসেবে কিছু বিষয় সুস্পষ্ট করেছে ঢাকা স্টাফ। চলুন জেনে নেই।
ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিন্নতা:
ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিন্নতার কারণে দেশ দুটির জনগনের মধ্যে এক ধরনের বৈপরীত্য সবসময় পরিলক্ষিত। এক ধর্মের লোক অন্য ধর্মের লোকদের দেখতে না পারার সংস্কৃতি বৃটিশরা এই দুদেশের জনগনের মধ্যে ঠুকে দিয়েছিল আরও প্রায় শত বছর আগে। সেই সংস্কৃতির ধারাবাহিকতায় এখনো বাংলাদেশি মুসলমানরা যেমন হিন্দুদের দেখতে পারেন না, তেমনি হিন্দুরাও মুসলানদের দেখলে নাক ছিটকান।
এই "দেখতে না পারা" আর "নাক ছিটকানো" র সংস্কৃতির কারনে ধীরে ধীরে যেমন বাংলাদেশে ভারত বিরোধিতা বৃদ্ধি পাচ্ছে তেমনি ভারতীয়দের মধ্যে যারা বাংলাদেশিদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেন তাদের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ভারতের প্রভাব বিস্তার নীতি
ভারত সবসময় পার্শ্ববর্তী দেশের উপর প্রভাব বিস্তার করতে চাওয়ার নীতি নিয়ে আগালেও হিতে তাদের বিপরীত দেখতে হয়েছে। নেপালের উপর প্রভাব খাটাতে গেলে নেপালিরা ভারত বিরোধিতা করে রাস্তায় নেমে পড়েছিল। শ্রীলঙ্কার উপর থেকেও নিজেদের কর্তৃত্ত্ব হারিয়ে ফেলেছে ভারত।
মিয়ানমারের উপর চীনের কারনে তেমন প্রভাব খাটাতে না পারলেও বাংলাদেশে তাদের প্রভাব খাটানোর যে মনস্তাত্ত্বিক চিন্তাধারা, এই চিন্তাধারা ই বাংলাদেশের বৃহৎ এক গোষ্ঠীকে ভারত বিরোধিতার দিকে ঠেলে দিয়েছে।
সীমান্তে হত্যাকাণ্ড
ভৌগলিক দিক থেকে বাংলাদেশের তিন দিকেই ভারত। প্রায় ৪০৯৬ কিলোমিটার জুড়ে বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্ত থাকায়, সীমান্ত সম্পর্কটা বাংলাদেশে খুবই পরিলক্ষিত।
তথ্যমতে, ২০১০ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ভারতীয় বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স তথা বিএসএফের হাতে প্রায় ৪০ জন বাংলাদেশি হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে। যদিও এর বাস্তব সংখ্যা আরও কয়েকগুন বেশি।
এসব হত্যাকান্ডের কারনেই মুলত বাংলাদেশিদের অনেকেই ভারত বিরোধিতায় লিপ্ত।
বাস্তবতা হলো, ভারতীয় বিএসএফের হাতে "শুটিং অন সাইট" নীতি দেওয়া রয়েছে যাতে তারা কারনে কিংবা অকারনে সীমান্তের কাছে যেকোন নাগরিককে গুলি করতে পারে।
এটি ই মুলত বাংলাদেশি হত্যায় বিরাট ভুমিকা পালন করছে।
এদিকে ফেলানীর মত আরও বহু হত্যাকান্ড বিএসএফ ঘটিয়েছে যার কারনে গত দশকে ভারত বিরোধিতা প্রচন্ড রুপ ধারণ করেছে।
বিতর্কিত মেগা প্রজেক্ট
কিছু মেগা প্রজেক্ট যেগুলো ভারতের সহায়তায় হচ্ছে কিন্তু প্রাকৃতিকভাবে পরিবেশের উপর ক্ষতিকর। যেমন সুন্দরবনের রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র। মুলত এটি ভারতের সহায়তায় বাংলাদেশে হলেও এর মালিক যৌথভাবে ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কর্পোরেশন (ভারত) এবং বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বাংলাদেশ)।
সুন্দরবনের পরিবেশের উপর ক্ষতিকর একটি প্রজেক্ট বাংলাদেশের কাধে চাপিয়ে এর থেকে সুবিধা ভোগ করার যে নীতি ভারত গ্রহণ করেছে তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশিদের ফুসিয়ে তুলেছে।
ক্রিকেটে বিতর্ক
হাস্যকর হলেও ভারত বিরোধিতার ক্ষেত্রে এটি একটি বড় নিয়ামক। ক্রিকেটে বাংলাদেশের উত্থান হওয়ার পর এটি এখন বাংলাদেশের একমাত্র জাতীয় ইস্যু। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে ভারতের কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত যেগুলো বাংলাদেশি ক্রিকেট প্রেমীদের দাগ কেটে যায়। এরপর থেকে ক্রিকেটে এই দু দেশের মধ্যকার দ্বৈরথ যেমন বেড়েছে তেমনি এর প্রভাব ভারত বিরোধিতার উপরেও পড়েছে।
মুলত পার্শ্ববর্তী দেশের মধ্যে সম্পর্কের চড়াই উৎরাই সবসময় থাকে। একসময় ভারত যেমন বাংলাদেশের ভালো বন্ধুপ্রতীম ছিল তেমনি বাংলাদেশীরাও ভারতীয়দের বন্ধু ভাবাপন্নই ছিল।
সময়ের পরিক্রমায় এই বন্ধুত্ব যেমন হারিয়ে গেছে, কবে নাগাদ আবার সেটি ফিরবে সেটি বলা দুষ্কর।
0 মন্তব্যসমূহ