মাশরাফির হাসপাতাল অভিযানে সমালোচনাকারীদের উপযুক্ত জবাব

মাশরাফির হাসপাতাল অভিযানে সমালোচনাকারীদের উপযুক্ত জবাব

www.dhakastaff.com

সবার আগে আপনাকে প্রশ্ন করা হলো, হাসপাতালে মাশরাফির অভিযানটি ঠিক ছিল নাকি বেঠিক? এটি অনুমেয় যে, উক্ত প্রশ্নের উত্তর সবার একরকম কখনোই হবে না। এক না হওয়ার মূল কারণ, প্রত্যেকের নিজস্ব ভাবনা, চেতনা ইত্যাদির ভিন্নতা সুতরাং মাশরাফির অভিযানটি কারও কাছে প্রশংসার দাবিদার হলেও অনেকের কাছে আবার সমালোচনার শিকার।

আমরা জানি, বাংলাদেশের ডাক্তারদের একটি বিশাল অংশ ডাক্তারি পেশাকে মানুষের সেবা হিসেবে না নিয়ে বরং এটিকে টাকা কামানোর মেশিন হিসেবে গড়ে তুলেছেন। যেটিকে আমরা, রমরমা ব্যাবসা হিসেবে আখ্যায়িত করতে পারি। এই ব্যাবসাটি এতটাই প্রবল আকার ধারণ করেছে যে, যেখানে একটি সরকারি হাসপাতালের ডাক্তারদের বিকেল পর্যন্ত হাসপাতালে থাকার কথা সেখানে তারা দুপুর থেকে নিজ চেম্বারে রোগী দেখেন! সকাল ৮টায় হাসপাতালে আসার কথা থাকলেও অনেকেই হাসপাতালে পা দেন ১০ টা কিংবা তারও পর!

সরকারি হাসপাতালে ডাক্তারদের ব্যবহার যতটা নিচু মানের হয়, চেম্বারে ঐ একই ডাক্তারের ব্যবহারের মান ততটাই উচু হয়।

শুধু এটুকুই না! আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয়, একজন ডাক্তারের সম্পর্ক সবচেয়ে ভালো হয় কার সাথে? রোগী,  ক্লিনিক মালিক নাকি কোম্পানির রিপ্রেজেনটেটিভদের সাথে? আশাকরি, উত্তর না বললেও আপনারা এ সম্পর্কে অবগত। 

দেশে যখন ডাক্তারদের এই অবস্থা তখন একজনকে না একজনকে এদের বিরুদ্ধে বের হতেই হবে। আজ অথবা কাল, এর সমাধানের জন্য আপনাকে একদিন দাড়াতেই হবে। মাশরাফি শুধু এ কাজটি হাসপাতালে গিয়ে শুরু করে দিয়ে এসেছেন তবে এর শেষ আমাদের ই করতে হবে।

মাশরাফির বিরুদ্ধে যারা অবস্থান নিয়েছেন তাদের একটি অংশ হয়তোবা, কোন কারণে মাশরাফিকে দেখতে পারেন না কিংবা তাদের পরিবারের কেউ অথবা নিজে ডাক্তারি পেশায় আছেন।

বিরুদ্ধে অবস্থান করা ব্যাক্তিরা হয়তো মাশরাফিকে অনেক প্রশ্নে ঘায়েল করতে পারবেন যার মধ্যে প্রথম ও প্রধান যে প্রশ্নটি উত্থাপিত হতে পারে সেটি হলো, যেখানে ডাক্তার প্রয়োজন ২৭ জন সেখানে যদি ৭ জন থাকে তাহলে ব্যার্থতা তো সরকারের। সরকারকে না বলে ডাক্তারের উপর ক্ষমতা দেখানোর কি প্রয়োজন? আবার এমনও প্রশ্ন পাওয়া যেতে পারে যে, নিরীহ ডাক্তারদের উপর ক্ষমতা দেখাতে পারলেও, প্রশাসনকে ক্ষমতা দেখাক তো! ম্যাশ কি সেটি পারবে?

আমরা জানি, প্রশ্নগুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু তারচেয়েও একটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ যে, আমাদের রাষ্ট্রটি কোন দিক থেকেই স্বয়ংসম্পূর্ণ না। প্রত্যেকটি সাইটেই কিছু না কিছু ঘাটতি আছে। তেমনি চিকিৎসা ক্ষেত্রেও ডাক্তারদের ঘাটতি আছে। এই ঘাটতিটুকু আমরা স্বীকার করি এমনকি ম্যাশও সেটি স্বীকার করেছেন। আমরা এতটুকু চাই যে, ঘাটতির মধ্যেও যতটুকু আছে তার সর্বোচ্চটা ব্যবহার হোক। নড়াইল সদর হাসপাতালে যদি ৭জন ডাক্তার থাকে তবে যেন সেই ৭জন ডাক্তার তাদের সর্বোচ্চটা দেন, কিন্তু সর্বোচ্চটা না দিয়ে ঐ সাত জনের অধিকাংশ যদি হাসপাতালে না থাকেন তবে দোষ টা কার? আমরা জানি, ডাক্তার সংকট কিন্তু যারা আছেন তারা কেন ঠিকমতো সেবা দেন না?
সাংসদ মাশরাফি তো এটাই ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করেছেন যে, আপনার হাসপাতালে থাকার কথা থাকলেও হাসপাতালে কেন নেই? আপনি নিজে ডাক্তার হয়ে যদি এসকল অন্যায়কে প্রশ্রয় দেন তবে নতুন করে আর কিছু বলার থাকে না। 


প্রশাসনকে কিছু বলুক, যারা এই বার্তা নিয়ে ঘুরছেন তাদের অন্তত সেদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে যতদিন না প্রশাসনের বিরুদ্ধে নড়াইলে কোন অভিযোগ তৈরি হয়। মাশরাফির হাসপাতাল অভিযানটি অভিযোগের ভিত্তিতেই ছিল।




সর্বোপরি, আমাদের সকলেরই মনে রাখা উচিত, পরিবর্তনের শুরুটা একটি বিন্দু থেকেই শুরু হয়। সেটি যদি শুরু হয় মাশরাফিকে ঘিরে তবে আমাদের সমালোচনা আজ না হোক, কাল তো বন্ধ হতে বাধ্য।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ

  1. মাশরাফির অভিযানটি যারা সমর্থন করে না এরাই প্রকৃত বাংলাদেশ বিরোধী।

    উত্তরমুছুন