আওয়ামিলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন। সম্প্রতি তার সুস্থ হয়ে উঠার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়েছে।
অপরদিকে বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া শারীরিক অসুস্থতার কারণে চিকিৎসা নিতে সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে ভর্তিরত। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বেগম খালেদা জিয়া হাটতে পারছেন না, ডায়াবেটিস এর পরিমান বেড়ে গেছে, খাওয়ায় অরুচি ইত্যাদি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাক্তাররা এটি নিশ্চিত করেছেন যে, বেগম খালেদা জিয়া জটিল কোন রোগে আক্রান্ত নন।
একই দিনে বাংলাদেশে দুই মেরুতে থাকা দুই দল খুশির খবর পেলেও সেই সাথে উভয় দলের কর্মী সমর্থকরা কষ্টও পেয়েছেন।
প্রথমত, যারা আওয়ামিলীগ করেন তাদের খারাপ বা কষ্ট পাওয়ার মত খবর হলো, বেগম খালেদা জিয়া জটিল কোন রোগে আক্রান্ত নন। অপরদিকে বিএনপি সমর্থকদের জন্য কষ্টের খবর, ওবায়দুল কাদের সেই আগের মত ভেংচি দিয়ে ফটোশুট করছেন।
ওবায়দুল কাদেরের অসুস্থতায় যা ঘটেছিলঃ
আওয়ামিলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অসুস্থ হয়ে পড়লে আওয়ামিলীগ সমর্থকরা বিচলিত হয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধু হাসপাতালে ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে যাওয়া হলে মুহুর্তের মধ্যেই সেখানে কর্মী সমর্থকদের প্রচন্ড ভীড় লক্ষ করা যায়। আওয়ামিলীগ সমর্থকরা মি. ওবায়দুল কাদেরের জন্য যতটা বিচলিত আর ব্যাথিত হয়ে পড়ে ঠিক ততটাই উৎফুল্লে মেতে উঠেন বিএনপি সমর্থকরা যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম রীতিমতো আনন্দে কাপিয়ে তুলেন। বিএনপি সমর্থকদের অনেকেই সেদিন ওবায়দুল কাদেরের মৃত্যু কামনা করে বিভিন্ন স্ট্যাটাস দেন। আবার অনেকেই ট্রল করে হাস্যরসে মেতে উঠেন। মাতামাতির মাত্রাটা এতটাই তীব্র ছিল যে, কোনভাবেই সেটি বাঙালি সংস্কৃতির সাথে যায়না। আরাফাত নামক একজন বিএনপির সমর্থক ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন, ওবায়দুল কাদের অসুস্থ হওয়ায় তিনি এতটাই খুশি যে, খুশির কারনে তিনি দুই রাকাত নফল নামাজ পড়েছেন এবং ওবায়দুল কাদেরের মৃত্যু কামনা করেছেন!
খালেদা জিয়া বমি করায় আওয়ামিলীগ সমর্থকদের প্রতিক্রিয়া যা ছিলঃ
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া শারীরিক অসুস্থতার কারণে বমি করেছেন। যেকোন সময় তার শারীরিক অসুস্থতা বৃদ্ধি পেয়ে জীবননাশ পর্যন্ত হতে পারে। মির্জা ফখরুলের বার্তাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসার পর পরই শুরু হয় আওয়ামিলীগ সমর্থকদের হাসি তামাশা। বয়োবৃদ্ধা একজন নারীর প্রতি চলে প্রচন্ড রকমের ঘৃণিত শব্দ। অনেকেই দাবী করেন, তারা বিএনপির ইটের বদল পাটকেল মারছেন।
আওয়ামিলীগের একজন সমর্থক স্টাটাসে জানান, এই বয়সে তিনি জেলখানায় থেকে কিভাবে বমি করেন?
ঢাকা স্টাফের মতামতঃ
একজন অসুস্থ ব্যাক্তিকে নিয়ে হাসি তামাশা করা কখনোই ভালো কাজ নয়। যারা এসব কাজ করেন তারা যেমন সমাজের গর্হিত একজন ব্যাক্তি ঠিক তেমনি ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকেও বিষয়টি পরিত্যাজ্য।
কোন ধর্ম একজন অসুস্থ, মরণাপন্ন ব্যাক্তিকে নিয়ে হাসি তামাশা সমর্থণ করে না। আপনারা সেদিন যারা খালেদা জিয়া কিংবা ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে ব্যাঙ্গাত্মক কথাবার্তা বলেছেন তারা কি মনে করেন না যে, ঐরকম অসুস্থতা আপনারও হতে পারে? হার্টে ব্লক কেবল ওবায়দুল কাদেরের ই হবে, আপনার বাবা, ভাইয়ের হবে না এমন কোন যৌক্তিকতা আছে?
সেদিন খালেদা জিয়াকে নিয়ে যারা কুৎসিত মন্তব্য করেছেন তারা কি মনে করেন না যে, একজন মানুষের বমি হওয়াটা সন্তান ধারণ ছাড়াও হতে পারে? আপনার বোন কিংবা আপনার মা কি কখনোই অসুস্থতার কারণে বমি করেন না? তাহলে বয়োবৃদ্ধা একজন নারীকে নিয়ে এত কুৎসিত মন্তব্য করার মানসিকতা কোথায় থেকে পেলেন আপনি?
আমাদের মনে রাখতে হবে, খালেদা জিয়া কিংবা ওবায়দুল কাদের তারা উভয়ই মানুষ। আর মানুষরা একদিন মারা যাবেন, তারা অসুস্থ হবেন। এসব মৃত্যু, অসুস্থতা যেমন ওবায়দুল কাদেরের জন্য সত্য তেমনি বেগম খালেদা জিয়ার জন্যও সত্য। আমরা যারা কাদের সাহেব আর খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে হাসাহাসি করেছি তারা কি এটা ভেবে দেখেছি, একদিন আপনিও থাকবেন অসুস্থতা কিংবা মৃত্যুর তালিকায়?