প্রায় দেড় বছর ধরে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া জেলে বন্দী। বর্তমানে খালেদা জিয়া সরকারের কাছে কুল টপিক। বলার মতো কোন আন্দোলন বিগত দেড় বছরে বিএনপি করতে পারেনি যেকারণে সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে সহজেই হজম করে ফেলেছে। ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে লোকমুখে শুনা গেল যে, সরকার একতরফা নির্বাচন করে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিবে কিন্তু নির্বাচন একতরফা হলো ঠিকই তবে বেগম খালেদা জিয়ার আর মুক্তি মিললো না। আর কবে নাগাদ খালেদা জিয়ার মুক্তি মিলবে তারও কালভাদ্র ঠিক নেই।
প্রশ্ন দাঁড়ায়, খালেদা জিয়ার মুক্তি পাওয়াটা কতটা জুরুরী?
এককথায় এর উত্তর দাঁড়ায়- মহাজুরুরী। পুনরায় প্রশ্ন, কেন মহাজুরুরী? চলুন জেনে নেয়া যাক:
একটি দেশে প্রধান বিরোধীদল না থাকলে সেদেশে সরকারী দল দুর্নীতিপরায়ণ হয় যার মাত্রা হয় অনেক বেশি। এর কারণ, বিরোধীদলের প্রধান কাজই হলো সরকারের ভুলগুলোর সমালোচনা করা এবং সংসদে দাঁড়িয়ে জাতির সামনে তা তুলে ধরা যদিও আমাদের দেশে সরকারের সমালোচনা করা মানেই মামলা, হামলা আর জেলের ভয়। তারপরও এই সমালোচনা আমাদের জন্য আবশ্যকীয়।
বেগম খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ার পর, আমরা যে বিএনপিকে দেখছি তা প্রধান বিরোধীদলের মতো সরকারের দূর্নীতি কিংবা ভুলের সমালোচনা করতে পারছে না। যদিও লিখিতভাবে ২০১৪ সাল থেকে সংসদের বিরোধীদল জাতীয় পার্টি কিন্তু আমাদের মতো সাধারণ আমজনতার কাছে বেগম খালেদা জিয়ার বিএনপি ই ছিল প্রধান বিরোধীদল। বেগম খালেদা জিয়া গ্রেফতার হওয়ার পর আওয়ামিলীগ বা সরকারের সমালোচনা করার মতো মুখ আর দ্বিতীয়টি পাওয়া যায়নি। যেকারণে, বর্তমান সরকারে অসংগতির সমালোচনা এবং তা জনগনের সামনে উত্থাপনের জন্য বেগম জিয়ার মুক্তি অনিবার্য।
বিগত কয়েকদিনে শেয়ারবাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা উধাও হলেও বিএনপি এ নিয়ে তেমন কথা বলছে না। বর্ষাকালে ঢাকাসহ পুরো বাংলাদেশের শহরগুলোতে যেরকম জলাবদ্ধতার তৈরী হয় তা নিয়ে তেমন কথাও বলছে না বিএনপি। অথচ বেগম খালেদা জিয়া হলে এসব নিয়ে কথা বলতেন।
আরেকটি বিষয় পরিলক্ষিত যে, যদিও এসব ব্যাপারে বিএনপির সিনিয়র নেতারা একটু আধটু কথা বলছেন, প্রেস ব্রিফিং করছেন কিন্তু সেটি বেগম খালেদা জিয়ার কথার মতো ততটা জোরালো হচ্ছে না, তেমন গুরুত্ত্বও পাচ্ছে না জনগনের কাছে। আজ যদি খালেদা জিয়া জেলের বাইরে থাকতেন, তবে জনসভার মতো প্রোগ্রাম করে এই বিষয় নিয়ে তিনি হয়তো কথা বলতেন। দেশজুড়ে অন্যরকম এক প্রতিবাদ হতো। সরকারিদলও তাদের সমালোচনার উর্ধ্বে রাখতে কিছুটা সাবধানতা অবলম্বন করতো।
কবে নাগাদ খালেদা জিয়া মুক্তি পাচ্ছেন?
বর্তমানে খালেদা জিয়ার বয়স পচাত্তর ছুই ছুই। এরকম বৃদ্ধা একজন নারী যিনি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, তাকে জেলে রাখা অনেকটাই দুর্ভিসন্ধিমূলক। গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রেও একজন আসামীকে বয়স বিবেচনায় শাস্তি কমানো হয় সেখানে বেগম জিয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বয়ঃবৃদ্ধা হওয়া সত্ত্বেও তেমন কোন সুবিধা পাচ্ছেন না। তিনি যে তথাকথিত অপরাধ করেছেন তার জন্য বয়স বিবেচনায় মুচলেকা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত ছিল। সুতরাং যেহেতু, খালেদা জিয়ার একটি কুচক্র মহলের হাতে বন্দী সেহেতু সহসা তার মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা একদমই ক্ষীণ।
যতটুকু জানা গেছে, বেগম খালেদা জিয়া শারীরিক বিভিন্ন অসুস্থতায় ভুগছেন। যদি জেলেই খালেদা জিয়াকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে হয় তবে তিনি অবশ্যই মহামান্বিতা হবেন এবং সেই সাথে বাংলাদেশে একরকম বিশৃংখলার তৈরী হবে আর সেটি আওয়ামিলীগ সামাল দিতে পারবে কি না সেটাই তখন ভাবার বিষয়।
0 মন্তব্যসমূহ