শেখ হাসিনা সরকার কি স্বৈরশাসকে পরিণত হচ্ছে?

শেখ হাসিনা সরকার কি স্বৈরশাসকে পরিণত হচ্ছে?


২০০৮ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার পর টানা দশ বছরেরও অধিক সময় ধরে রাষ্ট্র পরিচালনা করছে শেখ হাসিনা সরকার। বাংলাদেশে এর আগে কোন সরকারই এত মেয়াদে একটানা দেশ পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন না। সে হিসেবে শেখ হাসিনা সরকার আগের সব রেকর্ড ভেঙে ২০০৯ সাল থেকে একটানা রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন। এর মধ্যে ২০১৪ সালের নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় আওয়ামিলীগ ১৫১ আসনে বিনাভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করে এবং ২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলেও রাতেই ব্যালট বাক্স পুরণ করা হয়েছে অভিযোগ উঠে। বিতর্কিত নির্বাচনকে ছাপিয়ে টানা তিন মেয়াদে রাষ্ট্র পরিচালনায় আসা আওয়ামিলীগ সরকার কতটা গণতান্ত্রিক দ্বারা অব্যাহত রেখেছে তা নিয়ে গোটা বিশ্বেই আলোচনা সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। আওয়ামিলীগ এটিকে স্বীকার করতে না চাইলেও, নিজেদের গণতান্ত্রিক সরকার প্রমানে তারা বারবার ব্যার্থ হয়েছে।

আওয়ামিলীগ সরকার কতটা গণতান্ত্রিক ধারায় দেশ পরিচালনা করছে তা নিয়ে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যায়। বিশ্ব রাজনীতির কঠিন সমীকরণে আওয়ামিলীগ সরকার গণতন্ত্রের সঠিক প্রয়োগ করছে কি না কিংবা স্বৈরশাসকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে কি না তা নিয়ে জল্পনা কল্পনার মধ্যে, আওয়ামিলীগ সরকারকে স্বৈরশাসক সরকার হিসেবে আখ্যায়িত করেছে জার্মান গণমাধ্যম ডয়চে ভেলে। একটি দেশের সরকার স্বৈরশাসক কি না, তা মুলত নির্ভর করে দেশের বাক স্বাধীনতা,  বিচার বিভাগ এবং প্রশাসনের উপর।

বাক স্বাধীনতাঃ

শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বাক স্বাধীনতা অনেকটাই নিম্নমুখী বলে ধরে নেওয়া হয়। আওয়ামিলীগ সরকারের সমালোচনাকারীদের অনেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, টিভি টকশো তে সরকারের সমালোচনা করার কারনে অনেক জুলুম অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে। জেল জুলুমের ভয়ে এখন আর সরকারের বিরুদ্ধে কথা ই বলেন না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, স্বৈরশাসক এরশাদের আমলেও আমরা সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারতাম কিন্তু এখন সেই সুযোগও নেই।
গত বছর আইসিটি এক্ট আইনে মিডিয়াদের একরকম হাতকড়া পরিয়েছে সরকার বলে মত দেন তিনি।


বিচার ব্যবস্থাঃ

বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে বিচার বিভাগ সরকারি প্রভাব বলয়ে থাকার সৃংস্কৃতি বিদ্যমান থাকায় কোন সরকারের আমলেই বিচার বিভাগকে পূর্ণ স্বাধীন বলা যাবে না। কিন্তু বিগত টানা তৃতীয়বার শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় থাকায় বিচার বিভাগের উপর সরকারের প্রভাব অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে বলে ধরা হয়। এর মধ্যে সাবেক বিচারপতি সিনহাকে চাপ প্রয়োগ করে দেশত্যাগে বাধ্য করার উদাহরণটি শক্ত দলিল হিসেবে বলা যায়।
আওয়ামিলীগের আমলে বিচার বিভাগ সরকার কর্তৃক পরিচালিত বললেও দোষ হবে না। অনেকেই মনে করেন একজন প্রকৃত স্বৈরশাসক তার বিচার বিভাগ যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন, আওয়ামিলীগও অনেকটাই সেরকম বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করছেন।
প্রমাণ হিসেবে একজন ভুক্তভোগী জানান, একজন সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে বিচার ব্যবস্থা যেমন হয়, একজন আওয়ামিলীগ কর্মী বা নেতার ক্ষেত্রে বিচার তার উলটো হয়। ঐ ভুক্তভোগী জানান, আওয়ামিলীগ এক নেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করে যাবতীয় তথ্য এবং সাক্ষী থাকার পরও আসামী খালাস পেয়ে যান। তিনি আফসোস করেন, এই দেশের প্রতি তার আর কোন চাওয়া নেই।

প্রশাসন ব্যবস্থাঃ

বাংলাদেশের প্রশাসন সবসময় সরকারি দলের নেতাদের পক্ষে কাজ করেন, ব্যতিক্রম নয় বর্তমান প্রশাসনও। একজন সরকারদলীয় এমপির কাছে, জেলা প্রশাসকও ধরাশায়ী অবস্থা বলে মত দেন অনেকেই। প্রশাসনের কর্মকর্তারা দলীয় পরিচয়কে প্রাধান্য দেন বলে জানান, আন্দালিব রহমান পার্থের দল বিজেপির একজন নারী সমর্থক। শামসুন্নাহার নামক ঐ নারী বলেন, একজন কলেজের শিক্ষক যতটা না প্রশাসনের কাছে সম্মান পান তার চেয়ে বেশি সম্মান পান আওয়ামিলীগের পরিচয় দেওয়া গ্রাম পর্যায়ের নেতারা। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের প্রশাসনকে জনবান্ধব বলা যায় না।

আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে আওয়ামিলীগ:

গণতন্ত্রের বদলে উন্নয়ন, এই সুত্র ধরে বিশ্ব পরিমন্ডলে আওয়ামিলীগ নিজেদের তুলে ধরতে চেষ্টা করলেও ভারত ছাড়া বাকি প্রায় সকল দেশই বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ত্রুটিপূর্ণ হিসেবে মনে করে। পশ্চিমা বিশ্ব বাংলাদেশকে গনতান্ত্রিক দেশের তালিকায় তলানিতে অবস্থান দেয়ায় শেখ হাসিনা সরকার অনেকটাই বেকায়দায়। উপজেলা নির্বাচন থেকে যেকোন নির্বাচনে কারচুপি আর প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের কারনে বহির্বিশ্ব আওয়ামিলীগ সরকারকে গণতন্ত্রে বাধাদানকারী হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।




সবকিছু বিচার বিশ্লেষণ করে, একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে অনেকেই বলেন বর্তমানে শেখ হাসিনা সরকার পুরোদমে স্বৈরশাসক না হলেও অনেকটাই সে পথে রয়েছে। অনেকেই আবার জোর দিয়ে বর্তমান সরকারকে একটি স্বৈরশাসক সরকার হিসেবে আখ্যায়িত করেন।