বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া গত বছরের ৮ই ফেব্রুয়ারী থেকে কারাবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। ৭৩ বছর বয়স্কা একজন নারীকে কারাবন্দী করার পেছনে দায় কার? প্রকৃতপক্ষেই আদালতের একক সিদ্ধান্তে বেগম খালেদা জিয়া কারাভোগ করছেন নাকি আদালতকে কেউ প্রভাবিত করে তাকে কারাভোগ করাচ্ছেন, এ নিয়ে ঢাকা স্টাফের মতামত কলামে মাসুদুর রহমান কিছু বিশ্লেষণ তুলে ধরেছেন।
মি. মাসুদ বলেনঃ
বিভিন্ন সুত্রে জানা যায়, খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্তি দিতে সরকার কয়েকটি শর্তারোপ করেছে এর মধ্যে যেসকল সংসদ গত নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়ী হয়েছেন তাদেরকে সংসদে যোগ দেওয়ার শর্তটি প্রধান। এমন কিছু যে সরকারের পক্ষ থেকে আসতে পারে সেটি অনুমেয় ছিল।
এখন কথা হচ্ছে, সরকারের পক্ষ থেকে এই শর্তটি আসার পর নির্দ্বিধায় বলা যায়, খালেদা জিয়াকে কারাবন্দি করে রাখার পেছনে সরকারের হাত রয়েছে। সরকার এটিকে বারবার আদালতের ইখতিয়ার বলে প্রমান করতে চাইলেও কেবল এই শর্তের মাধ্যমেই সেটিকে নাকচ করে দেওয়া যায়।
তিনি আরও বলেনঃ
আওয়ামীলীগের সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বিভিন্ন মামলায় দন্ডিত হলেও তিনি কারাভোগ করছেন না, কারাভোগ করছেন না প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হোসেন মোহাম্মদ এরশাদও। সরকারদলীয় তথা আওয়ামীলীগের অনেক নেতাই বিভিন্ন মামলায় দন্ডিত হলেও কারাগার পর্যন্ত তারা যান না কিন্তু এর ঠিক উল্টোটা দেখা যায় বিএনপির ক্ষেত্রে।
তাহলে আপাত দৃষ্টিতে এটাই মনে হয় যে, আদালতে একরকম প্রভাব বিস্তার করে আছে সরকার নতুবা আওয়ামীলীগের ক্ষেত্রে একরকম বিচার, বিএনপির ক্ষেত্রে অন্যরকম বিচার হবে কেন?
মিঃ মাসুদ আরও বলেনঃ
খালেদা জিয়ার বর্তমান বয়স ৭৩ বছর। আদালতের দৃষ্টিতে বয়োবৃদ্ধা একজন নারীকে কারাবন্দী করে রাখার পেছনে কোন যুক্তিগত কারণ নেই। বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত বেগম খালেদা জিয়া নিজ পছন্দের কোন হাসপাতালেও চিকিৎসা নিতে যেতে পারছেন না অথচ মাঝে মাঝেই খবরের কাগজে দেখা যায়, বছরের অধিকাংশ সময়েই বার্ডেমের মত হাসপাতালের ক্যাবিনে শুয়ে কাটান কারাবন্দী আসামী।
একজন সাধারণ আসামী যদি বছরের অধিকাংশ সময় হাসপাতালের ক্যাবিনে শুয়ে দিন যাপন করতে পারেন তবে বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া কেন চিকিৎসা নিতে পছন্দের হাসপাতালে যেতে পারবেন না? এরপরও কি প্রমানিত হয় না যে, খালেদা জিয়াকে কারাবন্দি করার পেছনে সরকারের হাত রয়েছে?
খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্তি দিতে চাইলে বেগম খালেদা জিয়া রাজি হবেন কি না জানতে চাইলে মি. মাসুদ বলেন, বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতির মানুষ। তিনি জেনে বুঝেই সেদিন (২০১৮ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি) আদালতে হাজির হয়েছিলেন। তিনি জানতেন, তিনি আদালতে গেলেই তাকে কারাগারে পাঠানো হবে। জেনে বুঝেই সে চিত্ত নিয়ে আদালতে হাজির হওয়া মানুষটি এত সহজে সরকারের ফাদে পা দিবেন তা আশা করাটা একরকম বোকামী। অন্তত এতটুকু নিশ্চিন্তে বলা যায় যে, এতটা সহজে তিনি প্যারোলে মুক্তি নিবেন না।
বিএনপি নেতারা বেগম খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করার জন্য যে অনশন শুরু করেছেন, তাতে তারা সফল হবেন কি না জানতে চাইলে মি. মাসুদ জানান, বিএনপি নেতারা চাচ্ছেন একটি বৃহত্তর আন্দালন গড়ে তুলার কিন্তু সরকার বর্তমানে যতটা আগ্রাসী মনোভাবাপন্ন তাতে মনে হয়না বিএনপি নেতারা এটি করে দেখাতে পারবেন।
আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে খালেদা জিয়া সরকার কর্তৃক কারাবন্দীর হওয়ার পর আওয়ামিলীগ সরকারের উপর কোন চাপ এসেছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সমস্যা যার সমাধানও তাকে করতে হয়। প্রথম দিকে এরকম চাপ সরকারের উপর এলেও বর্তমানে তা অনেকটাই প্রশমিত।
সবশেষে তিনি বলেনঃ
সরকার চাইলেই বেগম খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করতে পারেন। বাংলাদেশের মত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর আদালত যে সরকার কর্তৃক কিছুটা প্রভাবিত হয় তা প্রায় সবারই জানা। তারপরও সরকারের সদয় দৃষ্টির অপেক্ষায় এই কারণে যে, বিএনপিকে দূরে রাখার কারনে আমরা সংসদে তেমন শক্ত বিরোধী দল পাচ্ছি না যেকারনে আমাদের দেশের গনতন্ত্র প্রায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
এই গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে হলেও বেগম খালেদা জিয়াকে সরকারের মুক্তি দেওয়া উচিত কেবল তাহলেই আমরা প্রকৃত গণতন্ত্রের স্বাদ পাবো।