চাঁদকে হাইকোর্ট দেখালো বাংলাদেশ || নেপথ্যে যা ছিল

চাঁদকে হাইকোর্ট দেখালো বাংলাদেশ || নেপথ্যে যা ছিল

www.dhakastaff.com

বাংলাদেশে এই প্রথম চাঁদ দেখা নিয়ে জটিলতার কারণে হাইকোর্টে মামলা হয়েছে। হাইকোর্ট এই মামলার রায় নিষ্পত্তির জন্য মাত্র ১দিন সময় পাবেন। ১দিনের মধ্যে কোন মামলার রায় নির্ধারণ হতে যাচ্ছে সেটিও কম নয় বাংলাদেশে। বাংলাদেশে হঠাৎ করেই চাঁদ দেখা নিয়ে বিরল এ কীর্তিকলাপ কেন? চলুন সংক্ষিপ্ত আকারে জেনে নেয়া যাক, পেছনের কয়েকদিনে চাঁদ দেখা নিয়ে জটিলতার কারণ ও বর্তমান অবস্থা।

৬ই এপ্রিল ২০১৯:
বাংলাদেশের জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি ৬ই এপ্রিল বাংলাদেশের আকাশে কোথাও কোন চাঁদ দেখতে পাননি বলে জানান। যার ফলে তারা বলেন, যেহেতু ৬ তারিখ কোন চাঁদ দেখা যায়নি ফলে, ৭ই এপ্রিল আরবী ১৪৪০ সালের রজব মাসের ৩০দিন পূর্ণ হবে এবং ৮ই এপ্রিল থেকে পবিত্র শাবান মাস শুরু হবে। সে হিসেবে ২১ শে এপ্রিল দিবাগত রাত লাইলাতুল বরাত হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি।

৭ই এপ্রিল ২০১৯:
বিভিন্ন মসজিদের ইমাম ও খতিবসহ মোট দশজন জানান, তারা ৭ই এপ্রিল শাবান মাসের চাঁদ দেখেছেন। তারা দাবী করেন, আগামী ২০শে এপ্রিল দিবাগত রাতে লাইলাতুল বরাত পালিত হবে। বিষয়টি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে সেন্সিটিভ হওয়ায় উক্ত দশজন ব্যাক্তি সেটি ধর্ম সচিব বরাবর জানানোর সিদ্ধান্ত নেয়।

১০ই এপ্রিল:
বাংলাদেশ জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সাথে ভিন্নমত পোষণ করা ব্যাক্তিরা ধর্ম সচিব বরাবর আবেদন করলে, ধর্ম সচিব বিষয়টি আমলে নিয়ে ধর্ম প্রতিমন্ত্রীকে জানান।

১৩ই এপ্রিল:
ভিন্নমত পোষণকারীদের অভিযোগ গ্রহণ করে, শিক্ষা সচিব মুফতি মুহাম্মদ আব্দুল মালেককে প্রধান করে একটি সাব কমিটি গঠন করা হয়। সাব কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শরিয়াহ মোতাবেক ভিন্নমত পোষণকারীদের সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য বলা হয়।
চাঁদ দেখা নিয়ে ভিন্নমত পোষণকারীদের সাক্ষ্য দিতে বলা হলে তারা বিভিন্ন অযুহাতে সাক্ষ্য দেওয়া থেকে বিরত থাকেন। ফলে, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ এক বিবৃতিতে জানান, ৬ই এপ্রিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২১শে এপ্রিল পবিত্র লাইলাতুল বরাত পালিত হবে। 

১৫ই এপ্রিল:
ভিন্নমত পোষণকারীরা ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত নাকজ করে দিয়ে হাইকোর্টে রুল জারী করার সিদ্ধান্ত নেন। হাইকোর্ট ভিন্নমত পোষণকারীদের ১৭ই এপ্রিল পর্যন্ত অপেক্ষা করার জন্য অনুরোধ করেন এবং হাইকোর্ট থেকে অনুরোধ করা হয় যেন, ধর্মীয় সেন্সিটিভ বিষয় নিয়ে মামলা পর্যন্ত না যাওয়া হয়।

১৮ই এপ্রিল:
১৭ই এপ্রিল পর্যন্ত মীমাংসা না হওয়ায় ১৮ই এপ্রিল হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন ভিন্নমত পোষণকারীরা।


ঢাকা স্টাফের মতামত:

চাঁদ দেখা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ বিষয়টিতে মতানৈক্য কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যারা ভিন্নমত পোষণকারী আছেন, এমনও হতে পারে তাদের দাবী সত্য। যদি তাদের দাবী সত্য হয়ে থাকে তবে ২০শে এপ্রিল শবে বরাত পালিত হবে। আর যদি তাদের দাবী সঠিক না হয় তাহলে বাংলাদেশের জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সিদ্ধান্তই বহাল থাকবে। চাঁদ দেখা নিয়ে ভিন্নমত সৃষ্টি হলে ইসলামী শরীয়াহ মতে, উভয়পক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণ নিতে হয়। উভয় সাক্ষীর সাক্ষ্য পর্যালোচনা করে শবে বরাতের দিন ধার্য করা হয়। দুঃখের বিষয় হলেও সত্য যে, ভিন্নমত পোষণকারীদের সাক্ষ্য দিতে বলা হলেও তারা সাক্ষ্য দিতে বিভিন্ন শর্তারোপ করেন, যা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। 



এত বিশাল মুসলিম অধ্যুষিত দেশে চাঁদ দেখা নিয়ে এমন জটিলতার সৃষ্টি হবে যা পুরোপুরি অপ্রত্যাশিত। আশাকরি আগামীকালের মধ্যেই হাইকোর্ট একটি সুষ্ঠু রায় দিবেন যদিও ব্যাপারটি ইসলামী শরীয়ায় যারা দায়িত্বশীল ছিলেন তাদের হাতেই ন্যাস্ত ছিল।