গুগল এডসেন্স এপ্রুভাল পেতে করণীয় : ব্লগার এবং ওয়েবসাইট

গুগল এডসেন্স এপ্রুভাল পেতে করণীয় : ব্লগার এবং ওয়েবসাইট

www.dhakastaff.com

আপনার লেখালেখি করার অভ্যাস। সেই অভ্যাস থেকে একটি ব্লগ তৈরি করে সেখানে নিয়মিত লিখছেন।
জানেন কি, আপনি সেই ব্লগ কিংবা ওয়েবসাইট থেকে সহজেই আয় করতে পারেন?
প্রশ্ন করতে পারেন, কিভাবে আয় করা যায়? তার উত্তর গুগল এডসেন্স!
আপনি হয়তো ভাবছেন, এটি জানতেই তো আজকে ঢাকা স্টাফের ক্যারিয়ার বিষয়ক কলামটি পড়ছেন।
আপনি হয়তো গুগল এডসেন্সে এখন পর্যন্ত এপ্লাই করেন নি কিংবা অনেক চেষ্টা করেও হয়তোবা গুগল এডসেন্স এপ্রোভাল পাননি ফলে আপনার লেখাগুলো বিনামুল্যেই মানুষ পড়ছে। আপনি আপনার লেখার যথোপযুক্ত  বিনিময় পাচ্ছেন না।
তবে চলুন জেনে নেয়া যাক, গুগল এডসেন্স এপ্রোভাল পাওয়ার আগে বিশেষ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যা আপনাকে গুগল এডসেন্স এপ্রোভাল পেতে সাহায্য করবে।

১) কপিরাইট কনটেন্ট পরিহার করুণ:

ব্লগ বা ওয়েবসাইটে লেখার শুরুতেই মনে রাখতে হবে একটি সিংগেল লাইনও কপি পেস্ট করা যাবেনা। আপনার লেখায় যেমন আপনার অধিকার আছে তেমনি, আরেকজনের লেখাতেও তার অধিকার রয়েছে। কারো লেখা চুরি করে আপনার নামে চালিয়ে দেওয়ার কোন অধিকার আপনার নেই। গুগল এই বিষয়টাতে অনেক সচেতন তাই, কোনভাবেই একজনের লেখা চুরি করে নিজের ব্লগে/ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবেনা। লাগলে ১মাস পর পর লেখা পাবলিশ করুন তারপরও কপি পেস্ট পরিহার করুন।

২) পোস্টের আকার:

আপনি একটি ২০০ শব্দের পোস্ট লিখলেন। এবার একটু ভাবুন তো, মাত্র ২০০ শব্দে কি কখনো মনের ভাব সম্পূর্ণ হয়ে যায়? একটি ব্লগে সাধারণত খোলামেলা আলোচনা থাকে। আপনি যখন একটি লেখা পাবলিশ করতে যাচ্ছেন তখন মনে রাখতে হবে, এটি একটি ব্লগ, ফেসবুকের পোস্ট না। ব্লগ পোস্টগুলি সর্বনিম্ন ৫০০ শব্দের হয়ে থাকে যদিও এটি কোন ব্লগের শব্দে সংখ্যার স্ট্যান্ডার্ড মান না তারপরও মোটামুটি ৫০০ থেকে ৮০০ শব্দের ব্লগগুলো মাঝামাঝি আকারের বলা যায়। আপনি ইচ্ছা করলে ১০০০ বা ততোধিক শব্দেরও লিখতে পারেন। মনে রাখবেন, সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার আপনার ব্লগটি অবশ্যই ব্লগের মত হতে হবে।

৩) টপ লেভেল ডোমেইন থাকতে হবে:

আপনি যে ব্লগ/ওয়েবসাইট চালান সেটির দু ধরনের ডোমেইন থাকতে পারে। প্রথমত, yourname.com অথবা yourname.blogspot.com। দ্বিতীয় যে ডোমেইন টি দেখছেন এটি একটি ফ্রী সাব ডোমেইন। এটি blogspot এর পরবর্তে wordpress ও হতে পারে। তবে যাই হোক না কেন, এরকম সাব ডোমেইন দিয়ে আপনি কখনোই গুগল এডসেন্স এপ্রোভাল পাবেন না। সেক্ষেত্রে আপনাকে একটি টপ লেভেল ডোমেইন কিনে ব্লগ/ওয়েবসাইটে সেটআপ করতে হবে। কিভাবে একটি ব্লগ বা ওয়েবসাইটে টপ লেভেল ডোমেইন সেটআপ করবেন তা নিয়ে টিউটোরিয়াল কলামে আলোচনা করা আছে। অবশ্যই আরেকটি কথা মনে রাখবেন, টপ লেভেল ডোমেইনের ক্ষেত্রে ডট কম, ডট নেট এবং ডট অর্গ এই তিনটি অগ্রাধিকার পেয়ে থাকে। সুতরাং ডোমেইন কিনতে চাইলে অবশ্যই এই তিনটর মধ্যেই কেনার চেষ্টা করবেন।

৪) অত্যাবশ্যকীয় কিছু পেজ:

অনেক সময় আপনারা ব্লগ বা ওয়েবসাইট তৈরী করে পোস্ট করা শুরু করে দেন। অনেকেই দেখা যায়, শতকের উপরে কন্টেন্ট পোস্ট করেও গুগল এডসেন্স এপ্রোভাল পান না, তার প্রধান কারণ আপনার ব্লগ বা ওয়েবসাইটটি গুগলের কাছে নির্ভরযোগ্য নয়। গুগল আপনাকে বিশ্বাস করেনা যে, আপনার ব্লগ বা ওয়েবসাইটটি একটি নির্দিষ্ট অস্তিত্ব বহন করে।
এর সমাধান কি?
এর সমাধান হল, আপনার ব্লগ সাইটে অবশ্যই চারটি পেজ থাকা বাধ্যতামূলক।

Contact:

আপনার ব্লগে অবশ্যই আপনার সাথে কন্টাক্ট করা যায় এমন একটি পেজ তৈরি করতে হবে। পৃথিবীর যেকোন ওয়েবসাইটে যান, তাদের সাথে কন্টাক্ট করার জন্য একটা পেজ আপনি দেখবেন ই। গুগল মনে করে, যদি কন্টাক্ট পেজ না থাকে তাহলে আপনার ওয়েবসাইটের অস্তিত্ব টা কার হাতে? গুগলকে এমন প্রশ্নে ফেলা নিশ্চয় আপনার উচিৎ নয়।

About:

আপনার ওয়েবসাইট টি কি রিলেটেড এবং এই ওয়েবসাইটের উদ্যেশ্য কি, এই সম্পর্কিত একটি পেজ অবশ্যই তৈরী করে রাখতে হবে। আপনার উদ্দ্যেশ্য জানা না থাকলে, গুগল কেন আপনাকে এডসেন্স এপ্রোভাল দিবে?  অবশ্যই আপনাকে আপনার পেজে এবাউট বা সম্পর্ক রিলেটেড পেজ রাখতে হবে।

Terms and Condition:

আপনার ব্লগ বা ওয়েবসাইটের নির্দিষ্ট কিছু শর্ত না থাকলে গুগল কোনভাবেই বুঝবে না যে, আপনার কন্টেন্টগুলো পড়ার ক্ষেত্রে কতটা উন্মুক্ত অর্থাৎ আপনার লেখাগুলো কেউ যদি কপি করতে চায়, আপনি সেটা কিভাবে নিবেন ইত্যাদি। সেটার জন্য অবশ্যই গুগলকে জানাতে হবে। সাথে সাথে আপনার ভিজিটরদেরও নিশ্চিত করতে হবে যে, যে কেউ চাইলেই কপি পেস্ট করার অধিকার রাখে না।

Privacy policy:

আপনার ওয়েবসাইট বা ব্লগের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব আপনার। একজন ভিজিটর আপনার সাইটে এসে যদি নিরাপত্তা না পায় তাহলে ভিজিটররা কেন আপনার ব্লগ বা ওয়েবসাইটে আসবে? এই ব্যাপারটাই নিশ্চিত হতে চায় গুগল। সুতরাং এই নিশ্চয়তা প্রদানে আপনাকে অবশ্যই একটি প্রাইভেসি পেজ তৈরি করতে হবে যেন, গুগল এবং ভিজিটর উভয়ই নিশ্চিত হতে পারে যে, আপনার ওয়েবসাইটটি নিরাপদ।


৫) গুগল এডসেন্স এপ্রোভাল পেতে ভিজিটর কত লাগে:

এই প্রশ্নটা হয়তো অনেকের মনেই দানা বাধে যে, এডসেন্স এপ্রোভাল পেতে প্রতিদিন গড়ে কত ভিজিটর প্রয়োজন? আসলে সত্যি বলতে গুগল এডসেন্সের কোথাও এ কথা উল্ল্যেখ নেই যে, গুগল এডসেন্স এপ্রোভাল পেতে আপনাকে নির্দিষ্ট একটা সংখ্যক ভিজিটর পেতে হবে। সুতরাং এই ব্যাপারটি এক প্রকার গোপনীয় ই বলা চলে।  মনে রাখবেন, ভিজিটর মুখ্য নয় বরং আপনার ব্লগ বা ওয়েবসাইটের গঠনটাই মুখ্য।


৬) ব্লগ বা ওয়েবসাইটের বয়স:

অনেকেই আছেন, আজকে ব্লগ বা ওয়েবসাইট খোলে কালকেই সেটিতে এডসেন্স এপ্রোভাল পাওয়ার জন্য এপ্লিকেশন করেন। বিষয়টা একরকম অদ্ভুত হয়ে গেল না? আজকে গাছ লাগিয়ে কালকেই যদি ফল খেতে চান তবে আপনার চেয়ে বোকা আর কে শুনি?
গুগল এডসেন্স এপ্রোভাল এর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ, ভারত এবং চীনের ওয়েবসাইটগুলোর বয়স সাধারণত ৬ মাস হতে হয় তবে এটি নির্দিষ্ট নয়। আপনার ব্লগ যদি উপরের সকল তথ্য পুরণ করে থাকে তবে ২/৩ মাসের মধ্যেই এপ্রোভাল পেয়ে যেতে পারেন তবে হ্যা, এক বা দুই মাসের মধ্যেই এপ্রোভাল পেতে চাইবেন না।

৭) পোস্ট সংখ্যা:

এক কথায় বলতে গেলে, পোস্ট সংখ্যা এমন হতে হবে যেন বুঝা যায় এটি একটি প্রফেশনাল ব্লগারের ব্লগ বা ওয়েবসাইট। আপনার ব্লগে যদি ২ বা ৩টি পোস্ট থাকে তাহলে কোনভাবেই বলা যাবে না যে, আপনি একজন প্রফেশনাল ব্লগার। এজন্য অবশ্যই আপনাকে আপনার ব্লগে ২০ এর অধিক পোস্ট রেখে তারপর এপ্রোভালের জন্য আবেদন করতে হবে।


মোটামুটি এই হলো গুরুত্বপূর্ণ টপিকস যেগুলো অনুসরণ করলে গুগল এডসেন্স এপ্রোভাল পেতে আপনাকে তেমন বেগ পেতে হবে না। পরবর্তীতে ঢাকা স্টাফে গুগল এডসেন্স এপ্রোভাল এর কিছু সিক্রেট আইটেম আলোচনা করা হবে। সে পর্যন্ত ভালো থাকুন আর এপ্রোভাল পেতে মাঠে নেমে পড়ুন।