ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেও হতে পারেন খামারি

ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেও হতে পারেন খামারি

www.dhakastaff.com

শিরোনাম দেখে হয়তোবা অনেকেই অবাক হয়েছেন। যদি খামারি ই হবেন তাহলে এত এত পরিশ্রম করে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার কি দরকার ছিল। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে পশু পালন, শুধুই বেমানান।

আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে কিংবা সমাজ ব্যবস্থায় একজন ইঞ্জিনিয়ার পশুপালন করবে এটা রীতিমতো অকল্পনীয় ব্যাপার। ব্যাপারটা কোনভাবেই এমনকি দুঃস্বপ্নেও ভাবেন না কেউ। ঢাকা স্টাফের ক্যারিয়ার বিষয়ক কলামে এই অবাক করা ব্যাপারটি ই আলোচনা করা হলো।

প্রথমতঃ
আপনাকে স্বীকার করে নিতে হবে কোন কাজ ই ছোট নয়। একটি দেশের প্রথম শ্রেনীর নাগরিক হয়ে এটুকু উপলব্ধি হয়তো করেছেন। এখন পর্যন্ত যদি এই উপলব্ধিটুকু না করে থাকেন তাহলে আপনাকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী হলফনামার দিকে তাকাতে অনুরোধ করছি। প্রধানমন্ত্রী তার হলফনামায় আয়ের উৎস হিসেবে কৃষিখাত উল্লেখ্য করেছেন (অন্যখাতও ছিল)।  একজন প্রধানমন্ত্রীর আয়ের উৎস যদি কৃষি হতে পারে তাহলে আপনার কেন নয়?

দ্বিতীয়তঃ
যেকোন পেশা কিংবা কাজের উদ্দ্যেশ্য আয় করা। আপনি যে কাজই করেন না কেন, দিনশেষে আপনি কত টাকা ইনকাম করলেন সেটি ই মুখ্য। দেখা গেল, আপনার একজন সরকারি চাকুরে বন্ধু মাস শেষে ৭০ হাজার টাকা বেতন পেল অপরদিকে খামার করে আপনি মাস শেষে ৭ লাখ আয় করলেন। এখন ভাবুন- কার অবস্থান কোথায়।
যদিও আজকের লেখায় অবস্থান মুখ্য নয়, মুখ্য হলো শিক্ষিত বেকার নামক আমাদের দেশে যে শব্দ প্রচলিত আছে তার কিছুটা সমাধান। একজন শিক্ষিত ইঞ্জিনিয়ার পাশ করা ব্যক্তি চাকুরীর আশায় নিজেকে বেকার করে রাখবে ব্যাপারটি খুবই লজ্জাজনক। এই লজ্জাজনক আর সামাজিক বাধ্যবাধকতার গণ্ডি পেরিয়ে আপনাকে বের হয়ে আসতে হবে। 

যেভাবে বের হতে পারেনঃ
ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে বাসায় বসে শুধু চাকুরির আশা না করে নিজে কিছু করার চেষ্টা করুন। যা আছে তাই নিয়ে কিছু করার মন মানসিকতা নিয়ে নেমে পড়ুন। পশুপালন, মৎস চাষ, অনলাইন ভিত্তিক ই কমার্স ব্যবসা, আউটসোর্সিং, ফলের চাষ, ফুলের বাগান আরও কত কিছু। যেকোন কিছু ই আপনি শুরু করে দিতে পারেন তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে লোকের কথায় নিজেকে আড়াল করার কিছু নেই। একজন অশিক্ষিত মানুষ মৎস চাষ করে যদি লাভবান হতে পারে তাহলে আপনি শিক্ষিত হয়ে কেন পারবেন না? বাংলাদেশের একজন ক্রিকেটার যিনি বর্তমানে বাংলাদেশ পার্লামেন্টের একজন সংসদ সদস্য মাশরাফি মর্ত্তুজা যদি মৎস চাষ করতে পারেন তবে ইঞ্জিনিয়ার হয়ে আপনার সমস্যা কোথায়?

কি ধরনের খামার করবেনঃ
যেকোন ধরনের পশুর খামার করতে পারেন। আপনি যেহেতু একজন ইঞ্জিনিয়ার সেহেতু দুই এক মাস নির্দিষ্ট পশুপালনের উপর প্রশিক্ষণ নিলে সেই ধরনের পশুপালন আপনি নিখুতভাবে করতে পারবেন। এক্ষেত্রে হতে পারে ছাগল পালন, গরুর খামার, হাস অথবা মুরগীর খামার ইত্যাদি।

ছোট একটি প্লেনিংঃ
যেহেতু আপনি একজন ইঞ্জিনিয়ার সুতরাং যেকোন কাজের আগে আপনার কাজের প্লেনিং থাকবে এটাই স্বাভাবিক। সেই স্বাভাবিকতা থেকে আপনাকে একটি প্লেনিং এর নমুনা দেওয়া হলো-

খামারের ধরণঃ ছাগল পালন
বাজেটঃ ৩,৫০,০০০ টাকা
বর্ণনাঃ
বাজেটের টাকা থেকে ধরুন আপনি ২,০০,০০০ টাকা দিয়ে ছাগল প্রতি ৫,০০০ টাকা দরে ৪০ টি ছাগল ক্রয় করলেন। ক্রয়কৃত ছাগলের জন্য ঘাসের ব্যবস্থা বাবদ ৫০,০০০ টাকা, চিকিৎসা বাবদ ২০,০০০ টাকা, খামার তৈরী বাবদ ৩০,০০০ টাকা ব্যয় করলেন।  বাকি টাকা দিয়ে একটি কর্মচারী রাখলেন। 
মুনাফার পরিমানঃ
একটি ছাগল বছরে ৪টি বাচ্চা দেয়। সেই হিসেবে বছর শেষে আপনার ছাগলের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ১৮০ টি। এক থেকে দেড় বছর পর ১৮০ টি ছাগলের বিক্রয়মূল্য হবে ৭,২০,০০০ টাকা (প্রতি ছাগলের মুল্য ৪০০০ টাকা হিসেবে)।  এবার আপনি লাভের হিসাব করে সিদ্ধান্ত নিন- পশুপালন করে লাভবান হতে পারবেন কি না।


বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকার দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। বেড়ে যাওয়ার হার টা স্বাভাবিকতার চেয়ে অনেক বেশি। আপনি ইচ্ছা করলেই বেকারত্বের গন্ডি থেকে বের হয়ে আসতে পারেন। ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে খামারি হয়ে শুধু খামার ই করতে হবে তা নয়। খামার করার পাশাপাশি আপনি চাকরির সন্ধ্যান করতে পারেন। চাকরি পেলে খামার করা বাদ দিতে পারেন অথবা আয়ের ভিন্ন উৎস হিসেবে চালিয়েও যেতে পারেন।