এইতো শেষ হয়ে গেল এইচএসসি পরীক্ষা ২০১৯। এখন থেকে অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী যারা মোটামুটি ভালো পরীক্ষা দিয়েছো তারা নেমে পড়বে ভর্তি যুদ্ধে। এই ভর্তি যুদ্ধ কারো কাছে অনেকটাই অসাধ্য আবার অনেকের কাছে তেমন কিছুই না। ভর্তি পরীক্ষার আগে, এই যুদ্ধ সম্পর্কে তেমন ধারণা কারোরই থাকেনা যদিও তুমি ভাবতে পারো, তুমি যথেষ্ট ভালো জানো কিন্তু আসলে কতটুকু জানো সেটা আবিষ্কার করতে পারবে ঠিক পরীক্ষার পর। হয়তো তুমি এখন অনেক ভালো জানো, তবে আরও বেশি জানবে ভর্তি যুদ্ধটা যখন শুরু হবে।
তোমরা অনেকেই হয়তোবা কোচিং এ ভর্তি হয়ে গেছো আবার কেউবা কোন কোচিং এ ভর্তি হবে সেটি নিয়ে রীতিমতো গবেষণা করছো আবার অনেকেই আছো যারা কোন কোচিংয়েই ভর্তি হবে না। তবে বাসায় টাকা পয়সা পর্যাপ্ত থাকলে তোমরা সবাই কোন না কোন কোচিং এ ভর্তি হয়ে যাবে এটা অনেকটাই নিশ্চিত। তবে যদি কোচিং এ নাও ভর্তি হতে পারো তবুও মন খারাপ করার কিছু নেই। একারণে নিজেকে পিছিয়েও রাখার কোন প্রয়োজন নেই। আজকে তোমাদের জানাবো যেকোন জায়গা থেকে কিভাবে ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করা যায় তার সাতটি যুগান্তকারী সুত্র যা তোমাকে কয়েকধাপ এগিয়ে দিতে সাহায্য করবে। যদিও আমি তোমার ভর্তি পরীক্ষা ভালো করে দিতে পারবো না কিন্তু যদি আমার লেখাটি ভালো করে পড়ো তাহলে হয়তোবা আজ থেকে নিজেকে অন্যরকম মনে হলেও হতে পারে।
1. ভর্তি পরীক্ষা কি? জানতে হবে:
তুমি হয়তো হাসছো, এটা আবার কি করে সুত্র হয়। তুমি তো ভর্তি পরীক্ষা কি সেটা জানোই। হুম, তুমি জানো আবার তেমন কিছুই জানো না। তুমি শুধু শুনেই এসেছো "ভর্তি পরীক্ষা" কিন্তু কখনোই এই পরীক্ষাটি খাতা কলমে দিয়ে আসনি। যেকারণে তুমি যেদিন তোমার জীবনের প্রথম ভর্তি পরীক্ষাটি দিবে তখন আবিষ্কার করতে পারবে আসলে তোমার ধারণা থেকে কতটা ব্যাতিক্রম এই পরীক্ষাটি কিংবা তুমি আবিষ্কার করতে পারবে, তুমি ভর্তি পরীক্ষা সম্পর্কে একটা মাত্র দিনেই অনেক কিছুই শিখে ফেলেছ। তবে, তোমাদের মধ্যে অনেকেই আছো যারা এর আগেও ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছো। বিভিন্ন স্কুল কিংবা ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হতে গিয়ে তোমাদের এই অভিজ্ঞতাটি হয়েছে। তোমাদের সবার জন্যই মনে রাখতে হবে, এই ভর্তি পরীক্ষাটি অন্য সকল পরীক্ষা থেকে অনেক ব্যাতিক্রম। এখানে শুধু তোমাদের মেধা যাচাই করা হয়না বরং তোমরা একটি নির্দিষ্ট সময়ে নিজেকে কতটা প্রস্তুত আর ঠান্ডা রাখতে পারো তারও পরীক্ষা করা হয়। মোটকথায়, এই ভর্তি পরীক্ষাটি হচ্ছে সময়ের সাথে পেরে উঠার নতুন এক প্রতিযোগিতা। বিশ্বাস করো, ভর্তি পরীক্ষায় একজন ছাত্রকে যে প্রশ্ন দেওয়া হয় তার সম্পূর্ণ উত্তর করতে গেলে কয়েক ঘন্টা লেগে যাবে কিন্তু কখনোই ঐ ছাত্রকে ঐটুকু সময় দেওয়া হয় না। আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর কথাই চিন্তা করো। ১২০ টি প্রশ্নের উত্তরের জন্য তোমাকে সময় বেধে দেয় মাত্র ৯০ মিনিট। একজন ছাত্রের পক্ষে কখনোই এই মাত্র ৯০ মিনিটে ১২০ টি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সম্ভব না। ভর্তি পরীক্ষা কি? এটির উত্তর এখন থেকে মনে রাখবে- সময়ের সাথে পেরে উঠার গল্প।
ইউ হ্যাভ টু বি ফাস্ট লিটল মোর
২. ভর্তি পরীক্ষার আগে ভাবো নিজেকে:
ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে তোমার ভাবনাটা এক দিনের জন্য হলেও উন্মুক্ত করে দাও। কোথায় আছো তুমি? কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে আছো? ভাবো আর নিজেকে প্রশ্ন করো। কি হতে চাও? জীবনটাকে কিভাবে প্রকাশ করতে চাও? অনেকগুলো প্রশ্ন, অনেকগুলো উত্তর। চলো, ভাবনার দুনিয়াটাকে আরেকবার ভাবি।
প্রথমেই ভেবে নাও, কি হতে চাও। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার নাকি বিসিএস ক্যাডার? যাই হতে চাও না কেন তোমাকে ভাবতে হবে, তোমাকে তোমার উদ্দেশ্যে পৌছাতেই হবে। নিজেকে চ্যালেঞ্জ ছুড়তে হবে, আমি পৌছাবোই। তোমার ভাবনাগুলো তোমার মস্তিষ্কে সেট করে দাও, তোমাকে পারতেই হবে। ভাবতে থাকো, তোমার যোগ্যতা তোমাকে প্রমাণ করতেই হবে। তুমি স্পেশাল। তুমি যোদ্ধা, তোমাকে লড়তে হবে। তুমি পারবে, পারতে তোমাকে হবেই।
যুদ্ধে অংশগ্রহণের আগে তোমাকে ভাবতে হবে, পৃথিবীতে না পারার কিছু নেই। সবাই যখন পারে তাহলে তুমি নও কেন? কেউ একবার পড়ে যদি ভালো কিছু করে তবে তুমি প্রয়োজনে পাচবার পড়ো।
পড়তে তোমাকে হবেই, নিজের জন্য কিংবা তোমার পরিবারের জন্য। ভাবনায় এক সফলতার গল্প থাকবে, ব্যর্থতার কোন গল্প হয়না
৩. শুরু করে শেষ পর্যন্ত যেতে হবে:
অনেক সময় আমরা ভর্তি পরীক্ষার প্রথম দিকে প্রচুর পড়ালেখা শুরু করি কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটি ধরে রাখতে পারিনা। তোমার কাছে এখন মনে হতে পারে, প্রচুর পরবো, দিনরাত পড়বো ইত্যাদি। হ্যা, তুমি দুই একদিন জীবনের সেরাটাই হয়তো পড়বে কিন্তু দুই একদিন পর সেটি বাদ দিলে চলবে না। বিলিভ মি, শতকরা ৮০ ভাগের উপরে ছাত্রছাত্রী যারা শুরুতে প্রচুর পড়ালেখা করে কিন্তু সেটিকে ধরে রাখতে পারেনা। মনে রাখবে, পড়ালেখা প্রচুর করার চেয়েও শেষ পর্যন্ত ধরে রাখাটা জুরুরী। অবশ্যই বেশি বেশি পড়তে হবে কিন্তু সেটি অবশ্যই ধরে রাখতে হবে। আজ প্রচুর পড়লাম কিন্তু আগামীকাল কম পড়লাম বা পড়লাম ই না সেভাবে হলে চলবেনা।
যুদ্ধে বিরতি বলে কিছু নেই। হয় সমাপ্তি নয়তো চলবে। যুদ্ধ বিরতি শব্দটা কেবলই হাস্যকর।
৪. জোর দিতে হবে বেসিকে:
বাংলাদেশে অনেক ছাত্রছাত্রী আছে যারা তাদের বই এর বেসিক না বুঝে শুধু বেশি বেশি পড়ালেখা করে। তোমাদের মধ্যে অনেকেই আছো যারা একটি বিষয় নিয়ে পড়ার সময় যাস্ট সুত্রগুলো ঠাসা মুখস্থ করো আর ম্যাথ করো। স্কুল কলেজের বোর্ড পরীক্ষাতেও এভাবে ভালো নাম্বার পেয়েছো কিন্তু মনে রাখবে, ভর্তি পরীক্ষায় তারাই জয়ী হয় যাদের বেসিক ভালো থাকে। বেসিক ভালো নেই কিন্তু চান্স পেয়েছে এমন ছাত্রছাত্রী খুবই কম। ধরতে পারো এরা ভাগ্যের জোরে টিকে যায়। তোমাকে অবশ্যই ভাগ্যের উপর নির্ভর করা চলবে না। বুঝে বুঝে আর বেসিকে জোড় দিলে ভাগ্য এসে তোমার হাতে ধরা দিবে। এতদিন বেসিকে জোর না দিয়ে এখন কি জোর দিলে লাভ হবে? অবশ্যই হবে, একটি বই দুই একদিন মনোযোগ দিয়ে পড়লে বেসিকের নাড়িভুড়ি আবিষ্কার করা যায়। তোমরা যারা বেসিকে দূর্বল তারা আজ থেকেই বেসিক উদ্ধারে লেগে পড়বে।
ভর্তি পরীক্ষা একরকম বেসিকের খেলা। বেসিক যার যত তার পাওয়ার তত বেশি। বর্তমানে যে ভর্তি পরীক্ষাগুলো হয় সেগুলো কখনোই হুবুহু আগের কোন প্রশ্নের সাথে মিলেনা কিংবা মিললেও সেটা দিয়ে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া যায় না।
বেসিক ক্লিয়ার থাকলে প্রশ্ন যেমনই হোক, সমাধান তোমার হাতে থাকবেই।
৫. প্রতিদিনের পড়া প্রতিদিন কমপ্লিট করতে হবে:
আজ নয় কাল, কাল নয় পরশু এভাবে দিনের পর দিন নিজেকে ঠকানো যাবেনা। পড়ালেখা আজকের জন্য, কালকের জন্য রেজাল্ট। এই বাক্যটুকু সবসময় মনে রাখতে হবে। পড়া জমাতে থাকলে একদিন সেটি আর পড়ার সময় থাকবে না। আজকের পড়া কালকে না পড়ে বরং কালকের পড়া আজকে পড়ার অভ্যাস করতে হবে। এটা যেকোন কাজের ক্ষেত্রেই অনুসরণ করবে। আজকের পড়া কালকের জন্য না জমিয়ে যদি আজকের পড়া আজকেই শেষ করতে পারো তবে কালকে কোন নতুন বিষয় পড়তে পারবে। ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করতে চাইলে এভাবেই এগিয়ে যেতে হবে। ছোট ছোট এই এগিয়ে যাওয়াগুলোই তোমাকে সফলতার মুখ দেখাবে।
ছোট ছোট করে এগিয়ে যাওয়াগুলো একদিন তোমাকে বিশাল পথ এগিয়ে দেবে।
৫. কনফিডেন্স দ্যা মেইন পাওয়ার:
নিজের উপর আস্থা রাখাটা অনেক জুরুরী। অনেকেই যদি পারে তবে তুমি কেন পারবে না? হ্যা, হয়তো তোমাকে অনেক কষ্ট করতে হবে কিন্তু তুমি পারবে না এমন তো নয়। নিজের উপর আস্থা রাখো। যুদ্ধের ফলাফল সবসময় অনিশ্চিত, কখন কারপক্ষে যায় তা বলা যায়না। এই অনিশ্চয়তার মধ্যে নিজেকে প্রকৃত যোদ্ধা হিসেবে গড়ে তুলো। তুমি থেমে যেতে আসো নি, তুমি বিশ্বকে দেখাতে এসেছো। তুমি সকল অবসাদ ভেঙে নিজেকে জাগ্রত কর।
জয় তোমার হবেই, তুমি অভয় থেকে শুধু নিজেকে প্রস্তুত রাখো। দেখা হবে, বিজয়ের মূর্ছনায়।
৬. অলসতাকে জানাও বিদায়:
যদি অলস প্রকৃতির হয়ে থাকো তবে এখনি ঝেড়ে ফেলো। ওটা তোমার জন্য নয়। ঘুম থেকে উঠি উঠি করে সকাল ৭ টার পরিবর্তে ১২ টা বাজানো যাবেনা। প্রয়োজনে ৫ সেকেন্ড রুল অনুসরণ করো। ৫সেকেন্ড রুলটি এমন যে, ঘুম থেকে উঠার কথা মনে হওয়ার ৫সেকেন্ডের মধ্যে উঠে পড়ো। এখন পড়ালেখা করতে মন চাইছে, ওকে ফাইন- ৫ সেকেন্ডের মধ্যেই পড়তে বসো। মনে রেখো, অলসতা একটি অভ্যাস। আর তুমি তোমার অভ্যাসকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারো। সুতরাং অলসতা তোমাকে পরিহার করতেই হবে।
অলস মস্তিষ্কে সফলতা আসেনা, যা আসে তা কেবলই ব্যার্থতার দুর্গন্ধ।
৭. পরীক্ষার বিশেষ কৌশল:
ভালো পড়ালেখা করে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেই ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। ভালো ফলাফল পেতে গেলে তোমাকে যেমন ভালো পড়ালেখা করতে হবে তেমনি পরীক্ষা দেওয়ার সময় কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হবে যা তোমাকে কয়েক ধাপ এগিয়ে রাখবে।
কৌশল ১: কখনোই ফুল মার্ক পাওয়ার জন্য পরীক্ষা দিবে না। আগেই বলেছি, ওটা তোমাদের কাজ নয়।
কৌশল ২: সহজ বিষয়গুলো সবসময় আগে উত্তর করবে।
কৌশল ৩: কারোও কাছে সাহায্য চাইবে না। একে তো ইলিগ্যাল আবার সময়ও নষ্ট হয়। ফলাফল, কেউ সত্য উত্তর দেয় না।
কৌশল ৪: তাড়াহুড়ো একদম করবে না। ঠান্ডা মাথায় যা পারো উত্তর করবে।
কৌশল ৫: কারও কথায় কান দিবে না। গাণিতিক প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে গিয়ে অন্যের উত্তরের সাথে নিজের উত্তর মিলাবে না।
কৌশল ৬: ভুল উত্তর দেওয়া থেকে বিরত থাকবে।
উপরের সাতটি ধাপ বা সুত্র যদি এইচএসসি পরীক্ষার পর থেকেই শুরু করো তাহলে তোমাকে কেউ অবরুদ্ধ করে রাখতে পারবে না। তুমি জেগে উঠবেই। আপন আলোয় নিজেকে জ্বালানোর শক্তি তোমার আছে তবে কেন জ্বালাবে না আলো? জ্বালিয়ে দাও আপন শিখা, আজ থেকে।
আর হে, কোথাও চান্স পেলে খবর টা আমাকে জানিয়ো। যদি এই লেখাটি থেকে সামান্য শক্তিও পাও তবে ইমেইল করতে ভুলো না।
ইমেইল: [email protected]
যদি পরীক্ষা নিয়ে কোন ধরনের প্রশ্ন থাকে তবে জানাবে।