ক্যারিয়ার মানে শুধুই সরকারী চাকুরী নয়

ক্যারিয়ার মানে শুধুই সরকারী চাকুরী নয়

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষের দিকে বিশেষ করে শেষ বর্ষে আমাদের দেশের ছাত্রছাত্রীরা যতটা না পড়ালেখা নিয়ে চিন্তা করে, তার চেয়ে বেশি চিন্তা করেন ক্যারিয়ার নিয়ে। চিন্তা করতে গিয়ে অনেকেই হতাশায় ভোগেন আবার এমন অনেকেই আছেন যারা মাত্রাতিরিক্ত ক্যারিয়ার চিন্তায় হতাশ হয়ে নিজেদের বিপথে ঠেলে দেন। মদ গাজায় আসক্ত হয়ে শেষ পর্যন্ত অনেকেই নিজেদের ধ্বংস করে দেন।

এর মুল সমস্যা কোথায়? আমাদের দেশের ছেলে মেয়েরা শেষ বর্ষে এসে ক্যারিয়ার চিন্তায় এতটা হতাশ হয়ে পড়েন কেন?

আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে সরকারী চাকুরির চাহিদা সবার উপরে। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া একজন শিক্ষার্থীর প্রথম পছন্দ ই থাকে সরকারী চাকুরী করা।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শুরুর দিকে সরকারি চাকুরী পাওয়ার বাস্তবতার মুখোমুখি না হলেও শেষের দিকে এসে তারা বাস্তবতাটি বুঝতে সক্ষম হোন। এই সক্ষমতাই তাদের কিছুটা হতাশ করে।

সাধারণত প্রতি বছর কয়েক লক্ষ ছাত্রছাত্রী তাদের অনার্স শেষ করেন। এমনিতেই কোটির উপরে বেকার তার মধ্যে নতুন নতুন এসব শিক্ষার্থীদের যোগ হওয়ায়, সরকারী চাকুরি প্রার্থী থাকে আকাশসমেত, সে হারে সরকারী চাকুরীর পোস্ট না থাকায় অনেকেই আশাহত হয়ে পড়েন। অনেকেই আবার সরকারী চাকুরির আশা ই ছেড়ে দেন।

আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা ক্যারিয়ার বলতে ভালো একটা চাকুরি ই বুঝেন। চাকুরির মধ্যে সরকারী চাকুরি ভিন্ন আর অন্যকিছু ক্যারিয়ারের মধ্যে রাখেন না।

ক্যারিয়ার বলতে কি কেবলই সরকারী একটি চাকুরি? কিংবা চাকুরি ছাড়া কি ক্যারিয়ার গড়া যাবেনা?

হ্যা, অবশ্যই সরকারী চাকুরি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি নির্ভরযোগ্য আয়ের উৎস কিন্তু ক্যারিয়ার মানে শুধু এই নয় যে, সরকারি চাকুরী। ক্যারিয়ারের উদ্দ্যেশ্য সফল হওয়া আর এই সফলতার জন্য চাকুরিটাকে বেইস করা এক ধরনের বোকামী। ক্যারিয়ার আপনি অনেক দিক দিয়েই গড়তে পারেন, সেটা হতে পারে- চাকুরী কিংবা ব্যবসা অথবা ফ্রীলান্সিং, হতে পারে ডিজাইনার অথবা ভিন্ন কিছু। পৃথিবীর যত সফল মানুষ আছেন তাদের অধিকাংশই ক্যারিয়ার হিসেবে সরকারী চাকুরী বেছে নেন নি। তাহলে আপনাকে কেন সরকারী চাকুরি বাছাই করতে হবে?

ক্যারিয়ার আপনি কিভাবে গড়বেন?
প্রত্যেক মানুষের নিজস্ব কিছু অভিজ্ঞতা আছে। চাকুরির পেছনে না ঘুরে আপনি আপনার নিজস্ব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগান।
পশুপালন থেকে শুরু করে ফ্রীল্যান্সিং, লেখালেখি থেকে ডিজাইনিং। কোন কিছুই ছোট নয়, আপনার ভালো লাগাটাই বড় কথা। আপনার যদি পশুপালনে অভিজ্ঞতা থাকে তবে সেটিকে কাজে লাগান। ইঞ্জিনিয়ার পাশ করে পশুপালন করা যাবে না, যদি এমন মনলজ্জা থাকে তবে আগে নিজেকে বিশ্বাস করুন। পৃথিবীতে কোন কাজই ছোট না, আপনাকে এটুকু আগে স্বীকার করতে হবে।

পশুপালন করে আপনি যদি প্রতি মাসে  কোটি টাকা আয় করেন তাহলে আপনি নিশ্চয়ই লাখ টাকা ইনকাম করা বিসিএস কর্মকর্তার চেয়ে কম যাবেন না।

বর্তমান পৃথিবীতে যোগ্যতাকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়। আপনি আপনার যোগ্যতাকে প্রাধান্য দিন। সরকারী চাকুরীর নেশায়, আপনার যোগ্যতাকে ঢেকে রাখার কোন মানে হয়না।  আপনার যোগ্যতা যদি হয় আপনার কাছে নেহাত সামান্য, তবুও সেটি দিয়ে শুরু করুন।