আগুন আগুন: গজব নাকি বাস্তবতা?

আগুন আগুন: গজব নাকি বাস্তবতা?



গত কয়েকমাসে বাংলাদেশে আগুনের শিরোনাম প্রায় রেকর্ড গড়েছে। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের আগ্নিকান্ড থেকে শুরু করে চকবাজার ট্র‍্যাজেডি, তারপর বনানী। সর্বশেষ যোগ হয়েছে গুলশানের ডিএনসিসি মার্কেটের অগ্নিকান্ড। পরিসংখ্যান বলছে ছোট বড় মিলিয়ে এই বছরে সারাদেশে প্রায় তিন হাজারের অধিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মৃতের সংখ্যাও শ ছাড়িয়েছে। সাধারণত বছরের এ শুষ্ক মৌসুমে আগুন লাগার হার সর্বাধিক থাকলেও এ বছর এটি বাংলাদেশে সর্বোচ্চ। মৃতের দিক থেকেও সংখ্যাটা ছাড়িয়েছে আগের সব রেকর্ড। 
হঠাৎ করে বাংলাদেশে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বেড়ে গেল কেন? এ বেড়ে যাওয়ার পেছনে কার দায় বেশি? সরকার, জনগণ নাকি স্রষ্টার সৃষ্ট গজব?

অনেকেই এটিকে ইনিয়ে বিনিয়ে স্রষ্টার গজব হিসেবে আখ্যায়িত করতে চেষ্টা করলেও অনেকেই এটিকে সরকারের ব্যার্থতা বলে দাবী করছেন। অনেকেই মনে করছেন বর্তমানে যেসকল বহুতল ভবন হচ্ছে তার বেশিরভাগই কোন রকম বিল্ডিং কোড মানছে না। অধিকাংশ বহুতল ভবনেরই অগ্নিনির্বাপক ব্যাবস্থা নেই। সরকার এসব জানার পরও ভবন মালিকদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

কোন ঘটনা ঘটলে সরকারের পক্ষ থেকে কমিটি গঠন করে দুই তিন দিন আলোচনা করার পর আবার সেই আগের মতই নীরব দর্শকের ভুমিকা পালন করে। এভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে চরম মুল্য দিতে হবে বলে মনে করেন অনেকেই। 

বাংলাদেশের অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থাও নাজুক। যেদেশে অগ্নি দূর্ঘটনার হার অনেক বেশি সেদেশে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা এতটা নাজুক হবে তা প্রায় কল্পনাতীত। বাংলাদেশের সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা অনেক অভিজ্ঞ হওয়া সত্ত্বেও অগ্নি ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা এবং নিম্ন মানের যন্ত্রপাতির কারণে প্রোপার সার্ভিস তারা দিতে পারেন না বলে জানিয়েছেন আবু সালেহ নামক একজন দমকলকর্মী যিনি বনানী দূর্ঘটনায় উপস্থিত ছিলেন। তিনি দাবী করেন, জুরুরি ভিত্তিতে যদি উন্নত মানের অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র আমদানি করা না হয় তাহলে দেখা যাবে এসব (বনানী এফ আর টাওয়ারের অগ্নিকান্ড) বড় বড় দুর্ঘটনাগুলো আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। তিনি সকলকে বিল্ডিং কোড মেনে ভবন তৈরি এবং সকল ভবনে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা রাখার বিষয়ে অনুরোধ করেন।

সরকারকে দোষারোপ করার পাশাপাশি আবার অনেকেই মনে করছেন, জনগনেরও কিছু দায়বার আছে। তাদের যুক্তি, সরকার যার যার ঘর এসে সামলাতে পারবে না। অনেকসময় দেখা যায়, অগ্নিকান্ডটি কয়েলের আগুনে ঘটছে অথবা রান্না ঘরের অসাবধানতার কারনে ঘটছে। এসব সরকার বন্ধ করতে পারবে না। এসব বন্ধে জনগনকেই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

মিঃ অলী নামক একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার জানান, বিল্ডিং তৈরীর যাবতীয় নিয়ম কানুন বিএনবিসি তে সরকার লিপিবদ্ধ করে দিয়েছে, যেটিকে আমরা বিল্ডিং কোড হিসেবে জানি। সরকার যেহেতু একটি কোড নির্দিষ্ট করে দিয়েছে সেহেতু যদি ঐসকল কোড মেনে বিল্ডিং করা হয় এবং তারপর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে তাহলে সরকারকে দোষ দেওয়া যায়। তবে তিনি স্বীকার করেন, একদল অসাধু কর্মকর্তা আছেন যারা কোড না মানা বহুতল ভবনগুলোকে ঘুষের মাধ্যমে অনুমোদন দেন। এসকল কর্মকর্তাদের চাকুরিচ্যুত করার ব্যাপারে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন মিঃ অলী।

বাংলাদেশে গত কয়েকমাসে যেসকল অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে তাতে সরকারের পক্ষ থেকে যদি তড়িত ব্যবস্থা নেওয়া না হয় তাহলে এরকম অগ্নিদূর্ঘটনা রোধ করা ভবিষ্যতে কঠিন হয়ে পড়বে।